শিব্বির আহমেদ, মোরেলগঞ্জ
সাগর ও নদীর ওপর নির্ভরশীল যাদের জীবন, প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে কর্মের তাগিদে অবিরাম ছুটছেন জীবন সংগ্রামের যুদ্ধে। এ রকম বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের ১০ গ্রামের জেলে পল্লীর হাজার হাজার জেলে পরিবারের জীবন যাত্রার মান আজও পরিবর্তন হয়নি। দুর্বিসহ জীবন কাটছে তাদের। বছরের পর বছর দেনাগ্রস্ত হচ্ছে সাগরে মাছ ধরা জেলে পেশার মানুষ। দাদনের জালে জিম্মি জেলেরা। বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি।
সরেজমিনে জানা গেছে, মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা, চিংড়াখালীর পূর্ব চন্ডিপুর পশুরিপাড়া, পুটিখালীর সোনাখালী, বহরবুনিয়া, বারইখালীর কাস্মির, খাউলিয়ার কুমারখালী, বলইবুনিয়ার শ্রেণিখালীসহ ১০ গ্রামের নদীর তীরবর্তী নিবন্ধনকৃত জেলে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। পিতা ও দাদার পেশাকে ধরে রেখে নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে চলে তাদের সংসার। পরিবার পরিজন নিয়ে কোন মতে দু’মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে আছে এসব জেলেরা। সকল পেশার মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হলেও আজও পরিবর্তন হয়নি জেলেদের জীবনযাত্রা। লেখাপড়া করিয়ে ছেলে মেয়েদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করাতে পারেনি তারা। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই এ গ্রামের জেলেপাড়ার মানুষের বসবাস নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ৮০ দশক থেকে পানগুছি নদীর অব্যাহত ভাঙনে প্রতিবছর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে তাদের বসতবাড়ি ও ফসলী জমি। ভাঙনে যেমন নিঃস্ব হচ্ছে অন্যদিকে নদীতে মাছ কম পাওয়ায় আয়ের উৎস্য দিন দিন কমছে।
গাবতলা গ্রামের জেলে বেল্লাল ফরাজী, সেলিম তালুকদার, গফফার তালুকদার, শহিদুল শেখ, জাফর তালুকদার, ইউনিয়ন মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন তালুকদারসহ একাধিক জেলেরা বলেন, তাদের জেলে পাড়ায় ৩০টি ছোট বড় মাছ ধরার ট্রলার এরমধ্যে ১৭টি ট্রলারে জেলে শ্রমিকরা বছরের ৪ মাস সাগরের পশ্চিম সুন্দরবনের কচিখালী, কটকা, শ্যালা নদী ও নারিকেলবাড়িয়ায় মাছ ধরে। মৌসুমের শুরুতেই দাদন ব্যবসায়ী মহাজনেদের কাছ থেকে ৪/৫ লাখ টাকা অগ্রীম নিয়ে সাগরে মাছ ধরে, আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি করতে হয় মাছ।
মহাজনদের অগ্রিম টাকার বিপরীতে বড় অংেশর লভ্যাংশ দিতে হয়। পরবর্তীতে সামন্যতম আয় থেকে সারা বছর সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থার মাধ্যমে যা থেকে নিজ বাড়িতে হাঁস মুরগী পালন, পুকুরে মাছ চাষ ও আধুনিক প্রযুক্তিতে সবজী উৎপাদন করে এ জেলে পেশার মানুষের সংসারের চাকা সচল করা সম্ভব। পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, এ উপজেলায় নিবন্ধনকৃত জেলে রয়েছে ৯ হাজার ৫৬০ জন। এরমধ্যে সরকারি খাদ্যসহায়তার আওতায় জাটকা আহরণ থেকে বিরতণকারী ৩ হাজার ৩৩০ জন জেলে পরিবার পাচ্ছেন চাল। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ইতোমধ্যে এসব জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২২ সালে এ উপজেলায় ২০টি গরু বিতরণ করা হয়েছে।
