জাহাঙ্গীর আলম
দেশে প্রথমবারের মত উদযাপিত হয়েছে জাতীয় প্রবাসী দিবস। ‘প্রবাসীর কল্যাণ, মর্যাদা- আমাদের অঙ্গীকার, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় তারাও সমান অংশীদার’ এই প্রতিপাদ্যে যশোরেও বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালন করা হয়েছে দিবসটি।
শনিবার সকালে যশোর কালেক্টরেট চত্তরে বেলুন উড়িয়ে দিবসটি উদ্বোধন করা হয়। পরে শোভাযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (উপসচিব) রফিকুল ইসলাম। বক্তব্য দেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক শাহরিয়ার হাসান, কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার সাজ্জাদ হোসেন ভূঁঞা, রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, এনজিও কর্মী শামছুর নাহার পান্না, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের এফএভিপি আমিরুল ইসলাম, ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়কারী মুন্নাজা মাহিন ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক মাসুদ পারভেজ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক শাহরিয়ার হাসান যশোরের প্রবাসীদের অবদান তুলে ধরে বলেন, দেশের অর্থনীতির যেসব খাত নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি, তার একটি হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। আগের তুলনায় সম্প্রতি বৈধ পথে রেমিটেন্স বেশি পাঠাচ্ছে রেমিটেন্সযোদ্ধারা। যশোরে বিদেশগামীদের রেজিস্ট্রেশন ও বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট ২০১৬ সালে চালু হয়। যেখান থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হাজার বিদেশগামী কর্মী সেবা নিয়েছেন এবং ১ লাখ ১০ হাজার ১শ’ ৯৮ জন ব্যক্তি বিদেশে গেছেন। ২০২৩ সালে এ পর্যন্ত ২৪ হাজার ৩ শ’ ৬৮ জন ব্যক্তি এ জেলা থেকে বিভিন্নদেশে গমন করেছেন। যাদের রেমিটেন্সও দেশ এগিয়ে যেতে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে বৈধপথে বিদেশ গমনে এ জেলার অবস্থান ১৭ তম। মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা করে আর্থিক অনুদানের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৩৭৬ জন যার মধ্যে ২০২৩ সালে ৭১ জন। যশোরে বিদেশী কর্মীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এতে করে রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে যশোর জেলায় রেমিটেন্সযোদ্ধারা রেমিটেন্স প্রেরণ করেছেন ১৯৯.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ২১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুর ৫ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ৬৩.৭ মার্কিন ডলার এ অর্থবছর শেষে ধারণা করা হচ্ছে পূবের্র রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে ১৪৭ দেশে ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশ প্রবাসী রয়েছে; যারা প্রতি বছরে ২২ থেকে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠায় বলে তিনি জানান।
প্রধান অতিথি রফিকুল হাসান প্রবাসীদের সুখ-দুঃখে ও দালাল নির্মূলে সকলকে একসঙ্গে কাজ করবার আহ্বান করে বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আজ বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। বাংলাশের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বললে আগে গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে কথা বলতে হত। কিন্তু বাংলাদেশে বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ গার্মেন্টস সেক্টর ছাড়া চিন্তাও করা যায় এখন। প্রবাসী দিবস যে উদ্দেশ্য পালন করা হচ্ছে তা যেন সুদূরপ্রসারী হয়। প্রবাসীদের সুখ-দুঃখে আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আহসান হাবিব পারভেজ।
আলোচনা শেষে জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা আইওএম এবং কোইকা’র সহযোগিতায় মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর ‘বাংলাদেশে মানব পাচার প্রতিরোধে পাচার বিরোধী একটি সমন্বিত কর্মসূচী’ শীর্ষক প্রকল্প’র উপকারভোগী সালমা খাতুনকে জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। এছাড়া সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রদানকারী মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা এলাকার মালায়েশীয়া প্রবাসী তরিকুল ইসলামকে ক্রেস্ট ও প্রাইজবন্ড প্রদান করা হয়। যা গ্রহণ করেণ আব্দুর রহমান। এর পূর্বে একজন নারী ও একজন পুরুষকে বৈধভাবে বিদেশ গমনের জন্য সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।