আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের দিল্লির ইন্দ্রলোক এলাকায় মুসল্লিদের লাথি মারার ঘটনায় পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুক্রবারের (৮ মার্চ) ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকেই তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, রাস্তায় অনেকে একসঙ্গে নামাজ পড়ছিলেন। তারা যখন সিজদা করছেন, তখনই এক পুলিশ কর্মী নামাজিদের লাথি মেরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে হাজির অনেক নামাজি ওই পুলিশ কর্মীকে ঘিরে ধরে তার সঙ্গে তর্ক করতে শুরু করেন।
ওই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ওই ঘটনার নিন্দা করছেন এবং দোষী পুলিশ কর্মীর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, দিল্লি পুলিশ এটা খুবই খারাপ করেছে। তারা নামাজিদের মারল! এখানে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরেক যুবক বলেন, যে পুলিশ কর্মী এই কাজ করেছে, তাকে সাসপেন্ড না করে চিরতরে বরখাস্ত করা উচিত। যদি তা না করা হয়, তাহলে অন্য পুলিশ সদস্যরাও একই কাজ করতে পারেন।
যা বলছে পুলিশ
ওই ঘটনার জন্য দায়ী সাব-ইন্সপেক্টর মনোজ তোমারকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
উত্তর দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার মিনা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘একটি ভিডিওটি প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটিতে যে পুলিশ কর্মীকে দেখা গেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন যে পুলিশ কর্মী, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মিনা আরও জানিয়েছেন, ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়েছে। স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছি যে, এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’
এ ঘটনার একটি ভিডিও শেয়ার করে দিল্লি কংগ্রেস এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছে, এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?
এই ঘটনার পর কংগ্রেসের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য ইমরান প্রতাপগঢ়ি মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন,
নামাজ পড়ার সময় এক ব্যক্তিকে লাথি মারছিলেন দিল্লি পুলিশের যে সদস্য, তার সম্ভবত মানবিকতা নিয়ে কোনও ধারণাই নেই।
প্রতাপগঢ়ি আরও লেখেন, নিজের মনে এ কোন ঘৃণা পুষে রেখেছেন তিনি! দিল্লি পুলিশকে অনুরোধ ওই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ধারায় মামলা দায়ের করা হোক এবং তার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হোক।
কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাতে এক্সে লিখেছেন, অমিত শাহের দিল্লি পুলিশের একটি নীতিবাক্য রয়েছে শান্তি, সেবা, ন্যায়। পূর্ণ নিষ্ঠা সহকারে পালন করছে তারা।
দানিশ আলী এমপি বলেছেন, দেশে যে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ বিরাজ করছে তারই ফলশ্রুতিতে নামাজ পড়তে যাওয়া ব্যক্তিদের লাথি-থাপ্পড় মারার সাহস পাচ্ছে। আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে একদিন ভারতে এক সম্প্রদায়ের লোকেরা রাস্তায় প্রার্থনা করবে, তাদের উপর ফুল বর্ষণ করা হবে এবং অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের আঘাত করা হবে। ওই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা উচিত।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এ ঘটনাকে ‘ইসলামোফোবিয়া’ বলে অভিহিত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনাকে চিঠি লিখে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের দাবিতে চিঠি দিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, এ ধরনের ঘটনা বৈশ্বিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে।