রেজওয়ান বাপ্পী
যশোরে আনন্দের সাথে মাঠে মাঠে ধান কাটছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার উৎপাদিত ফসলের ফলনও হয়েছে ভালো, দামও ভালো। গত কয়েক বছরের লোকসানের পর এবার ভালো দাম পাওয়ায় খুশি এ জেলার ধানচাষিরা। তবে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করলে অনেকটা লাভ থেকে বঞ্চিত হবেন বলে দাবি তাদের।
যশোর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। কৃষকরা তাদের সিংহভাগ জমিতে আবাদ করেছেন ব্রি-১০৮, ব্রি-৫০, ব্রি-৬৩, ব্রি-১০০, বাঁশমতি ও রড মিনিকেট জাতের ধান। যার প্রতি বিঘা ফলন হয়েছে প্রায় ২৪-২৭ মণ। বর্তমানে বাজারে এসব জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে কৃষকেরা পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত। কেউ কেউ কাটা ধান আঁটি বাঁধছেন। কেউ মাথায় করে ধানের আঁটি বাড়ি নিচ্ছেন। আবার কেউ গোলায় ধান ভরছেন। সবমিলিয়ে প্রখর রোদ আর বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ধান ঘরে তোলা ও বাজারজাত করার কাজ। উৎপাদিত ফসলের বাম্পার ফলন ও দাম আশানুরূপ হওয়ায় খুশি তারা। অনেকেই হাট-বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বাড়ি থেকেও বিক্রি করছেন তাদের উৎপাদিত ফসল।
সদর উপজেলার ছোট মেঘলা গ্রামের হারুণ-অর-রশিদ বলেন, এবার ২৪ কাটা জমিতে ধান লাগিয়েছি। আশানুরূপ ফলও পেয়েছি। এবার এ এলাকার সব ধানচাষি লাভবান হবেন।
যশোরের ঝিকরগাছা পদ্মপুকুর গ্রামের প্রভাত কুমার বলেন, ১৫ কাটা জমিতে রড মিনিকেট জাতের ধান লাগিয়েছিলাম। এতে ১৭-১৮ মণ ফলনের আশা করছি। খরচ-খরচা বাদ দিয়ে এবার ১৫ হাজার টাকার বেশি লাভ হবে। কলাগাছি গ্রামের আশানুর রহমান জানান, ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন তিনি। প্রতি বিঘায় তার ফসল হয়েছে গড়ে প্রায় ২৬-২৭ মণ। তার প্রতি বিঘাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। প্রতিমণ ১৫০০-১৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও বিঘাপ্রতি ২০ হাজার টাকার বেশি লাভ হবে। অপর চাষি আব্দুস সামাদ বলেন, কয়েক বছর ধরে ধান চাষ করে লোকসান গুণতে হয়েছে। এবার চাষিরা স্বস্তি পেয়েছেন।
একই কথা জানালেন চৌগাছা উপজেলার আব্দুল গফুর, রমিজ আলী, সোবহান সরদারসহ একাধিক ধানচাষি। তারা জানান, এ বছর বোরো মৌসুমে তাদের উৎপাদিত ফসলের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বর্তমানে ধানের দামও ভালো হওয়ায় তারা বেজায় খুশি। কেনো না খরচ বাদ দিয়ে তাদের বিঘা প্রতি লাভ হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ঝিকরগাছা ফতেপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, এবার মৌসুমব্যাপী আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল না, পরিষ্কার ছিল। ধানগাছ নিয়মিত সূর্যের আলো পেয়েছে। ফলে সঠিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ করে বেশি পরিমাণে ফলন দিয়েছে। এ কারণেই ফলন ভালো হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন দৈনিক কল্যাণকে বলেন, ‘চলতি বোরো মৌসুমে যশোর জেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে দামও ভালো পেয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এতে খুশি তারা। পরবর্তি মৌসুমে জেলাজুড়ে ধান চাষ বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।
দীর্ঘদিন পর ধানচাষিদের মুখে লাভের হাসি : প্রতি বিঘায় লাভ ২০ হাজার টাকা
৪২ Views