রায়হান সিদ্দিক
দুই যুগ পর নাট্য উৎসবের আয়োজন করেছে যশোর ইনস্টিটিউট নাট্য কলা সংসদ। রোববার শহরের ঐতিহ্যবাহী বি সরকার ঘূর্ণায়মান মঞ্চে চারদিন ব্যাপি এই নাট্য উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
সাংস্কৃতিক শহর খ্যাত যশোরে বছরের প্রথম নাট্য উৎসব এটি। নাট্য উৎসবকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে বি সরকার মেমোরিয়াল হলের চারপাশ। কনকনে শীত উপেক্ষা করে নাট্যপ্রেমী দর্শরাও হাজির হন ঠিক সময় মতো। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় নাট্য উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। প্রধান অতিথির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পর মঞ্চের আলো নিভে যায়।
এরপর মঞ্চজুড়ে লাল আলো, সেই আলো ভেদ করে মঞ্চে হাজির হয় একদল মানুষ। বস্তা পেচানো দেহের নানা কলা কৌশলে কোন এক কষ্টের ইতিহাস বলতে চাই তারা। গল্পটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সকালের। ঢাকা সহ সারা দেশে তখন মৃত মানুষের স্তুপ। সেই স্তুপ সরানোর দায়িত্ব পড়ে তৎকালীন সুইপারদের। বিভৎস্য সেই দিনের গল্প নিয়েই মূলত নাটক রক্তস্নান।
নাটকটির পরতে পরতে ছিলো একাত্তরের নানা বিভৎস্যতার গল্প। নাট্য উৎসবের উদ্বোধনী দিনে শিপন চৌধুরীর রচনা ও স্বপন দাসের নির্দেশনায় যশোর ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদ এই নাটকটি মঞ্চায়িত করে। দ্বিতীয় নাটক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ রচনা ও খন্দকার রজিবুল ইসলামের নির্দেশনায় স্বাধীনতা সংগ্রাম মঞ্চায়িত করে উদীচী যশোর।
যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, এমন জমজমাটভাবে গত দু’যুগে নাট্যকলা সংসদ কোন নাট্য উৎসব করতে পারেনি। এবারের আয়োজনটি দর্শকদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করবো প্রতি বছর যশোরবাসীকে এমন নাট্য উৎসব উপহার দেয়ার জন্য।
নাট্য উৎসব উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট চুন্নু সিদ্দিকী বলেন, কনকনে এই শীতের মাঝেও স্বতঃস্ফূর্ত দর্শকদের আগমন বলে দেয় আমরা একটি সফল নাট্য উৎসব আয়োজন করতে পেরেছি। চারদিনব্যাপী এই নাট্য উৎসবে দিনাজপুর ও যশোরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় ৮টি নাটক মঞ্চায়িত হবে। প্রতিদিন ৫০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে দর্শকরা দুইটি করে নাটক উপভোগ করতে পারবেন।
‘নাট্যচর্চা শ্রেণি বৈষম্য বিলোপের হাতিয়ার’ এই স্লোগান নিয়ে যশোর ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদের আয়োজনে চারদিন ব্যাপী এই নাট্য উৎসবে ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় ব্যঞ্জন যশোরের পরিবেশনায় শাহীন রহমানের রচনা ও আসিফ খানের নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হবে নাটক শেষ গহবর। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মাসুদ উদ জামানের রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হবে শব্দ থিয়েটারের নাটক অব্যক্ত আধার।
১০ জানুয়ারি ভৈরবী থিয়েটার দিনাজপুরের পরিবেশনায় নাটক দানেশ উপ্যাখান পরিবেশনা হবে। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন টিটো রেদয়ান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শ্যামলতনু দাস গুপ্তের রচনা ও আলমগীর হোসেন বাবুর নির্দেশনায় তির্যক যশোরের নাটক চোরেদের লজ্জা হলো মঞ্চায়িত হবে।
১১ জানুয়ারি নাট্যকলা সংসদের পরিবেশনায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচনা ও স্বপন দাসের নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হবে নাটক বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ। সন্ধ্যা ৭টায় বিবর্তন যশোরের পরিবেশনায় মঞ্চায়িত হবে নাটক পাইচো চোরের কিচ্ছা নাট্যরুপ কাজি চপল ও নির্দেশনা দিয়েছেন বৈদ্যনাথ অধিকারী। ওই দিন রাত ৮টায় সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে ৪দিন ব্যাপী নাট উৎসবের।
১ Comment
Pingback: যশোরে স্বর্ণ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত - দৈনিক কল্যাণ