তবিবর রহমান
যশোর মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নের অর্থ লুটপাটে দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিত ও সুনির্দিষ্ট দায় নির্ধারণ করতে ফের তদন্ত হচ্ছে। আগের তদন্তে তহবিল তছরুপ ও সমবায় সমিতি আইন লংঘনের প্রমাণ মেলায় এবার কার কতটা দায় এবং কী শাস্তি প্রাপ্য তা নিশ্চিতে বিভাগীয় সমবায় কার্যালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা সমবায় অফিসার এসএম মঞ্জুরুল হককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার প্রতিবেদন দিতে হবে ৩০ মার্চের মধ্যে।
এরআগে শুধুমাত্র সভাপতি মোজাম্মল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্ত হয়। তদন্ত করতে গিয়ে অনেক খাতে অনিয়ম ধরা পড়ে। সেখানে ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপ, অযৌক্তিক ভাতা গ্রহণ ও সমবায় সমিতি আইন লংঘনের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। এজন্য কমিটির ১১ সদস্যকেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। যা আগামী ৭দিনের মধ্যে (২১ মার্চ) সবাইকেই জবাব দিতে বলা হয়েছে। শোকজপ্রাপ্তরা হলেন, সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, সহসভাপতি শামস উদ্দিন, সহ-সম্পাদক জহির উদ্দিন, সদস্য ইসাহাক আলী, ওসমান গণি, আব্দুর রশিদ, মোশারফ হোসেন, রওশন আলী বিশ^াস, রিপন মোল্লা ও আব্দুর রশীদ। কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয় ‘ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও সদস্যদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করেছেন। সমিতিটি দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হওয়ার কারণে কমিটি থেকে তাদের বহিস্কার বা ব্যবস্থাপনা কমিটি কেন ভেঙ্গে দেয়া হবে না’ তার জবাব চাওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা সমবায় অফিসার এসএম মঞ্জুরুল হক বলেন, মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে বিভাগীয় সমবায় দফতরে চিঠি দেন সমিতির সহসম্পাদক জহির উদ্দিন। অভিযোগের তদন্ত করতে বিভাগীয় কার্যালয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাঘারপাড়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে। তদন্ত শেষে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কমিটি প্রতিবেদন দেয়। এতে অনিয়মের সত্যতা মেলে। সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিত ও দায় নির্ধারণ করতে গত ১২ মার্চ বিভাগীয় সমবায় কার্যালয় থেকে ফের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাকে প্রধান করে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তার হাতে চিঠি পৌছেছে।
আগের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক যশোর শাখায় সঞ্চয় থাকা ১ কোটি টাকার বিপরীতে ৪৫ লাখ টাকা সমিতির নামে ঋণ হিসেবে উত্তোলন করেন। এ টাকার মধ্যে সভাপতি ৩০ লাখ ও সাধারণ সম্পাদক ১৫ লাখ টাকার তহবিল তছরুপ ও আর্থিক ক্ষতি করেছেন।
এছাড়া সমিতির বর্তমান কমিটির সদস্যরা ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৯টি, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১৩টি, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯টি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেছে। অহেতুক এসব সভা করে ভাতা গ্রহণের মাধ্যমে সমিতিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যা বিধিমালা ২০০৪ এর ৪২(২) ধারা লংঘন।
অন্যদিকে, পূবালী ব্যাংকের ৫০ শতাংশ শেয়ার বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতেও সাধারণ সভার অনুমোদন ও বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের নিবন্ধকের অনুমতি নেই। আর স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক যশোর শাখায় স্থায়ী আমানতের মূল রশিদ ব্যাংকে জমা রেখে ঋণ গ্রহণের তথ্য গোপন করা হয়। এখাতে তহবিল তছরুপে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নির্লিপ্ত থেকে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। তবে এতে জড়িত নয় দাবি করেছেন রেজায়ানুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, এফডিআর করা কপির একটি ভুয়া সেটা তিনি দেখেননি। সেটা পলিথিনের মোড়ানো অবস্থায় আলমারিতে রেখে দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে সাধারণ সভার অনুমোদন ও বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের নিবন্ধকের অনুমতি ছাড়া সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এক কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ৯০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। এ টাকা থেকে ৪১ লাখ ৯৫ হাজার একশ টাকা জমি ক্রয় খাতে বিনিযোগ দেখানো হলেও এখন পর্যন্ত জমি কেনা হয়নি।
মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, টাকা উত্তোলন করা যাবে না, তা জানা ছিল না। জানার পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ৪৫ লাখ ব্যাংকে রিফান্ড করেছেন। আর জমি কেনার জন্য যে টাকা উত্তোলন করেছেন তা দিয়ে বায়না বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে। সেখানে সংগঠনের পরিচালক ইসহাক আলীর স্বাক্ষর রয়েছে। তিনি নিজে এ টাকা পরিশোধ করেছেন। জমির দাতা ছফুরা খাতুন, তার ছেলে শহিদুল ইসলাম এবং তাদের আরেক শরীক জাহিদ হাসান টাকা বুঝে নিয়েছেন। যা তাদের কাছে ডকুমেন্ট রয়েছে।
