বিনোদন ডেস্ক
পশ্চিমবঙ্গে আলোচিত শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় টালিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্তকে দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বৃহস্পতিবার বনি সেনগুপ্তকে দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি থেকে নোটিশ পাঠিয়ে শুক্রবার বেলা ১১টার মধ্যে বনিকে দপ্তরে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি একদিন আগে বৃহস্পতিবার সকালে ইডির আঞ্চলিক দপ্তর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন।
সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হন রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের যুব কমিটির সদস্য কুন্তল ঘোষ। তার সঙ্গে বনির আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানায় ইডি। সংস্থাটি বলছে- কুন্তলের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ গিয়েছিল বনির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সেই তথ্যকে সামনে রেখেই বনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার সকালে ইডির দপ্তরে পৌঁছে যান টালিউড এ অভিনেতা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে ইডি।
প্রথম দফায় প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে ইডির দপ্তর থেকে দুপুরের খাবার খেতে বাইরে বের হন বনি। খাওয়া শেষে ফের বিকেল ৩টার কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় দফায় ইডির দপ্তরে হাজিরা দেন তিনি। বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ইডি দপ্তর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বনি বলেন, ২০১৭ সালে কুন্তলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। প্রথমে জিরাটে কুন্তলের একটি ওপেনিংয়ে গিয়েছিলাম। এরপর থেকে কুন্তলের বার্থডে পার্টি ও তার ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমি যাই। সেই থেকে আমাদের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়।
আরও পড়ুন:না ফেরার দেশে অভিনেতা-পরিচালক সতীশ কৌশিক
তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কুন্তলের একটি গাড়ি কেনাবেচা নিয়ে লেনদেন হয়। তার কাছ থেকে নেওয়া আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ লাখ রুপি দিয়ে আমি একটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছিলাম। যদিও পাঁচ বছর পরই ওই গাড়িটি বিক্রি করে দেই। সেই সময় গাড়ির শোরুমেই তার পেমেন্ট হয়, যেহেতু গাড়িটা আমার নামে তাই আমাকে ডাকা হয়েছে।
টালিউড এ অভিনেতা বলেন, কুন্তল নগদে ওই অর্থ পেমেন্ট করতে চেয়েছিলেন আমাকে। কিন্তু আমি নিতে রাজি হইনি। তাকে বলেছিলাম গাড়ি নির্মাতা সংস্থার অ্যাকাউন্টে দিয়ে দিতে।
তিনি আরও বলেন, তখন কুন্তলের এ কাজকর্মের বিষয়ে আমি জানতাম না। জানলে আমি নিশ্চয়ই কুন্তলের কাছ থেকে ওই অর্থ নিতাম না।
বনি বলেন, সিনেমা তৈরির জন্য কুন্তলের সঙ্গে আমার কোনো চুক্তি হয়নি। তবে সিনেমার কাজ করার জন্য কুন্তল রুপি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা দিয়ে সিনেমা তৈরি হয়নি। বদলে ২০ থেকে ২৫টা ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলাম।
তদন্তে সহায়তা করবেন বলেও জানান বনি। তিনি বলেন, আমি তদন্তে সহযোগিতা করছি। আমাকে একবার ডাকার পরই আমি এখানে এসেছি।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে নাম লেখান বনি সেনগুপ্ত। যদিও ওই সময় বনির মা অভিনেত্রী পিয়া সেনগুপ্ত ও বান্ধবী অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায় তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন বনি। এরপর ওই বছরেই পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভার নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে প্রচারণায় দেখা যায় বনিকে।
বিজেপি ছাড়ার সময় বনি জানান, বিজেপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা তারা রাখতে পারেনি। তাই বিজেপি ছাড়েন তিনি।
ইডি সূত্রে জানা যায়, এ মামলায় সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন টালিউডের চার অভিনেত্রী। তাদের একজন প্রথম সারির নায়িকা। চার অভিনেত্রীর সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন হলে তলব করা হবে।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হওয়ার পর প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জীকে। অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাট থেকে ৫০ কোটি রুপি, স্বর্ণের গহনা, শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ও সনদ উদ্ধার করা হয়। এরপর তদন্ত যত এগিয়েছে, একের পর এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার খবর সামনে এসেছে। গ্রেপ্তারও হয়েছেন অনেকে।
আরও পড়ুন:পোশাক নিয়ে আবারও পোশাক ট্রলের শিকার দীপিকা