দুর্নীতির ধারণা সূচকে (সিপিআই) এবারো বাংলাদেশের স্কোর ২৬। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২১’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আফতেখারুজ্জামান সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাব্যঞ্জক ও উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। ইউপি মেম্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পৌরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারি বিভিন্ন অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পুলিশের বিরুদ্ধে তো অভিযোগ আছেই। সরকারের কিছু জনকল্যাণমূলক প্রকল্প আছে। এক শ্রেণির চাটার দল সেগুলো চেটে পুছে খেয়ে শেষ করছে। ফলে নামেই দরিদ্র প্রকল্প চলছে, দরিদ্ররা তার সামান্য স্বাদটুকু পাচ্ছে না। ১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে যে চালবাজি এ দেশে হয়েছে বা হচ্ছে তার খবর পত্র-পত্রিকায় পাতা জুড়ে ছাপা হয়েছে। কিন্তু চালবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কতটুকু নেয়া হয়েছে তা আজ পর্যন্ত অন্ধকারেই থেকে গেল। জনসাধারণ জানতে পারলো না।
গরিব মানুষের কল্যাণে বর্তমানে বেশ কিছু ভাতা চালু আছে। কিন্তু এসব ভাতাগুলো হলো, বয়ষ্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহিতা ভাতা, প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠির জন্য উপবৃত্তি, পঞ্চাশোর্ধ বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠির বিশেষ ভাতা, হিজড়া ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ভাতা। এসব ভাতা বণ্টনে অবর্ণনীয় দুর্নীতি চলেছে। এ দুর্নীতি ঠেকাবে কে? এ প্রশ্নের জবাব নেই। ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। দরিদ্র কল্যাণমুখী এমন একটি প্রকল্প কতটা উপকারের তা একমাত্র ভূক্তভোগীরা উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু এই টাকা খাচ্ছে বিত্তবান চেয়ারম্যান-মেম্বররা। একটি ওয়ার্ডে যদি ৩০ জনের কাজ দেয়া হয় তাহলে ৩০ জনের একটি তালিকা তৈরি করে জনা পাঁচেক গরিব মানুষকে কাজে লাগায়। বাকি ২৫ জনের ভুয়া স্বাক্ষরে হররোজ ৫ হাজার টাকা তুলে নিয়ে হজম করছে। এই টাকাটা ভাগ করে খাচ্ছে চেয়ারম্যান-মেম্বররা। গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা এ ভাবে খেতে তাদের একটুও বিবেকে বাধছে না। এ নিয়েও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কেন যে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না তা কেউ জানে না। রাজনৈতিক চাপ আছে কিনা তা রাজনৈতিক নেতারাই ভালো বলতে পারবেন। এই প্রকল্পের আবার দুর্নীতির নতুন ধরনের টেকনিকের খবর মিডিয়ায় এসেছে।
বিস্ময়কর ঘটনা হলো এই যে অবাধ দুর্নীতিতে যারা গা ভাসিয়েছেন তারাই কিন্তু মঞ্চ মাত করছেন দুর্নীতি বিরোধী কথা বলে। তারা বলছেন সব কিছু ডিজিটালাইজড করার ফলে দেশে দুর্নীতি কমেছে। দুর্নীতি খুঁজে বের করতে হলে অনুবিক্ষণ যন্ত্রের দরকার হবে না। দুর্নীতি এমনভাবে শেকড় গেড়েছে যে, সততা স্টোর খুলে আর অফিসে অফিসে ‘আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত’ এ হাস্যকর প্রচেষ্টায় দুর্নীতি বন্ধ হতে পারে না। যে দেশে অসৎ উপায়ে পয়সা আয় করাকে গর্বের বিষয় বলে ভাবা হয় সেখানে এসব পদ্ধতিতে দুর্নীতি বন্ধ হবে না। সৎ ও নিষ্ঠাবন কর্মী দিয়ে ছদ্মবেশে তথ্য সংগ্রহ করলেই দুর্নীতির ভয়াবহ সব চিত্র পাওয়া যাবে। আর এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কোনোরূপ দুর্বলতা দেখানো যাবে না। আমার বরাবরই বলছি দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রচলিত সব পদ্ধতি বাদ দিয়ে কর্তৃপক্ষ সময়োপযোগী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে গোটা জাতি এর বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হবে। জাতিকে এ ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা করতেই হবে।