নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার ছোবল কমে আসায় খুলেছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা, রাজনৈতিক দলগুলো সড়কের উপর সমাবেশ করছে, ব্যাংকগুলোর গাড়ি থাকছে সড়কে। যেকারণে যশোরে দেখা দিয়েছে ঢাকার মতো মারাত্মক যানজট। যানজটের কবলে পড়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অফিসমুখী মানুষ ও রোগীরা চরম বিপাকে পড়েন। সচেতন মহল বলছেন, নাজুক ট্রাফিক ব্যবস্থা, যথেচ্ছা গাড়ি পার্কিং আর সড়ক দখল করে সভা সমাবেশ যানজটের প্রধান কারণ। এসব নিরসন হলে মানুষ স্বস্তি পাবে।
গতকাল সোমবার শহরের প্রধান সড়ক দড়াটানা হাসপাতাল মোড়, পৌরসভার সামনে, ঈদগাহ মোড়, মাওলানা মোহাম্মদ আলী সড়ক, চৌরাস্তা, সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার সামনে, মনিহার এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট। দীর্ঘ সময় যানজটে থেকে তীব্র রোদে মানুষ হাফিয়ে উঠে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজমুখি শিক্ষার্থীরা বেশি বিপাকে পড়ে।
অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, যশোরে ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে বললে ভুল হবেনা। বেড়েছে ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি চাঁদাবাজি ও দুর্ব্যবহার। শহরের ব্যস্ততম সড়কের প্রবেশ মুখে লেগেই থাকে যানজট। অবৈধ ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশা ও নসিমন করিমনে ভরে গেছে শহর। রাতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে শহরে প্রবেশ করছে ভারি যানবাহন।
ট্রাফিক অফিস সূত্রে জানা যায়, যশোর ট্রাফিকে বর্তমানে লোকসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৮০ জন। এর মধ্যে পরিদর্শক ৫ জন, সার্জেন্ট ৭ জন, টিএসআই ৬ জন, এটিএসআই ১০ জন ও কনস্টেবল ৫২ জন। এতো লোকবল থাকার পরও যশোর শহরে যানজট লেগেই থাকে। শহরের ব্যস্ততম সড়ক ও সড়কের প্রবেশ মুখে বিশেষ করে শহরের বটতলাস্থ সেন্ট্রাল রোডের প্রবেশ মুখে, জেনারেল হাসপাতালের সামনে, চিত্রা মোড়, মুজিব সড়কের প্রবেশ মুখে, সিভিল কোর্ট মোড়ে, শহরের চেরাস্তা মোড়ে কোতোয়ালি থানার সামনে, শহরের মনিহার এলাকায় যত্রতত্র রাস্তার উপর ইজিবাইক, অটোরিকশা থেমে থাকে। এসব অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশার কারণে প্রতিনিয়তই শহরে যানজট লেগে থাকছে। আর এদের কারণে ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে জেনারেল হাসপাতালের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মুমূর্ষ রোগীদের এ পথ দিয়ে হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু রাস্তার উপর অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা অবস্থানের কারণে রোগী হাসপাতালে নেয়াতো দূরের কথা রাস্তা দিয়ে চলাচলই দায় হয়ে পড়ে। আর এসব কিছুই ঘটছে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সামনে। পৌরসভার হিসাব অনুযায়ী শহরে পা চালিত (প্যাডেল) অনুমোদিত রিকশার সংখ্যা ১৫শ’র কিছু বেশি। অনুমোদিত ইজিবাইকের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৫ ও স্মার্ট রিকশার সংখ্য ২৯ টা। অথচ অনুমোদনবিহীন রিকশা, ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশা প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার।
অভিযোগ রয়েছে শহরে চলাচলকারী অবৈধ ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশা, নসিমন, করিমনের চালকদের কাছ থেকে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ টোল আদায়ে ব্যস্ত থাকে। যে কারণে তারা যানজট নিরসনের সময় পান না।
ট্রাফিক সার্জেন্টরা ব্যস্ত থাকেন বছরে মামলার টার্গেট পূরণে। শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে মোটর সাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে প্রতিনিয়তই মোটর সাইকেল চালকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যান্য যানবাহন প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস. থ্রিহুইলার, বাস, ট্রাক আটকে ট্রাফিক পুলিশ কোন অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায় না। মোটর সাইকেলের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য, ওভার লোডিং বা ভিন্ন ধারায় মামলা দেয়া হয়। এসব মামলা নিয়ে ট্রাফিক অফিসে গেলে দায়িত্ব প্রাপ্তদের দুর্ব্যবহারের স্বীকার হতে হয় মোটর সাইকেল চালকদের। পুলিশের একজন কর্র্মকর্তা জানান, জরিমানার টাকা জমা দেয়ার রশিদ জমাদানকারীকে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। যদি কেউ না দেয় সেটার ভিতর অবশ্যই অনিয়ম বা ঘাপলা আছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি যশোরের সভাপতি সুকুমার দাস জানান, শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সড়ক আটকিয়ে সমাবেশ, রাস্তায় গাড়ি পাকিংয়ের কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখনই সঠিক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে যশোরে যানজট মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ট্রাফিক পরিদর্শক মশিউর রহমান জানান, শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটসাইকেল বহুগুণে বেড়েছে। সেই সাথে রিক্সা-ইজিবাইকতো আছেই। পৌরসভা শহরের ধারণক্ষমতার বেশি রিক্সা ও ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর সামনে বিক্ষিপ্তভাবে যানবাহন রাখছে। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব গাড়ি রাখছে সড়কের উপরে। শহরের বেশিরভাগ মার্কেটে পার্কিং নেই। আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সড়কে সমাবেশ করছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১২টি বড় গাড়ি শহরে প্রবেশ করছে। যেকারণে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা। যানজট নিয়ন্ত্রণে আমাদের সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।