নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে টানা চার দিন মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। এটি আরও কয়েক দিন চলমান থাকবে বলে আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন। গতকাল দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর ২টায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যশোর বিমানবন্দরস্থ আবহাওয়া দফতর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মৃদু তাপপ্রবাহে জনমনে অস্বস্তি দেখা গেছে। বাইরে বের হওয়ার সময় অনেকেই ছাতা নিয়ে বের হচ্ছেন। শ্রমিকদের তীব্র রোদে গামছা মাথায় দিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। এছাড়া তাপদাহের কারণে নেমেছে পানির স্তর। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ।
যশোর বিমানবন্দরস্থ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন, যশোর অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গাতে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন ছিলো তেতুলিয়ার ডেমরাতে ১৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী তিন দিনে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
শহরের রিকশাচালক আসলাম আলী বলেন, একে তো রোজার মাস, এর মধ্যে গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে। একটা পেসেঞ্জার নিয়ে নামিয়ে দিয়ে আর কাউকে রিকশায় উঠাতে মন চাচ্ছে না। তাই মাঝে মাঝে গাছতলায় বিশ্রাম নিয়ে ফের যাত্রী বহন করছি। সামনে ঈদ, বসে থাকার সময় নেই। তাই কষ্ট করেও রিকসা চালাচ্ছি। যশোর শহরের দড়াটানা হাসপাতালের সামনে রিকশার হ্যান্ডেল ধরে গরমে হাঁসফাঁস করছিলেন চালক নুরনবী। পরিধেয় শার্ট ভিজে একাকার। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই সপ্তাহখানিক ধরে গরম পড়ছে। রোদের তাপও খুব বেশি। ঈদ বলে লোকজন বাইরে আসছে। সকাল থেকেই বেলা ডোবা না পর্যন্ত রোদের তেজ থাকছে। একদিকে ওপর থেকে মাথায় রোদ পড়ছে, অন্যদিকে নিচে থেকে পিচের তাপ মুুখে লেগে যেন ঝলসে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় দাবদাহে পুড়ছে যশোর। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন। কালেক্টরেট ভবনের সামনে শরবত বিক্রেতা রফিক বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠ মাস আসেনি, এর পরেও এখনই এই গরম। জ্যৈষ্ঠ মাস আসলে কি হবে আল্লাহই জানেন। রোজার মাস হওয়ার পরেও তীব্র তাপদাহে তার শরবত বেচাকেনা ভালো হচ্ছে।’
এদিকে, গরমের প্রভাবে প্রতিদিন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন মানুষ। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গরম থেকে রেহাই পেতে রোগীরা ফ্যানের বাতাস নিচ্ছে। তারপরও প্রচ- গরম। এখন হাসপাতালে ডায়রিয়া, জ্বর, নিউমোনিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে বেশি। এমন পরিস্থিতিতে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা স্থানে ও যতœ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।