কল্যাণ ডেস্ক
গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে ‘দুর্নীতির সাগরে’ ডুবিয়ে রেখেছিল বলে দাবি করলেন ড. ইউনূস; সেই অবস্থায় দায়িত্ব নিয়ে দেশ পুনর্গঠনে হাত দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার; আর সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তা চাইলেন তিনি।
বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রবিবার ঢাকায় বৈঠকে সহযোগিতার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জানান বলে জানিয়েছে বাসস। তিনি মূলত তিনটি ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সহায়তা চেয়েছেন; সেগুলো হলো- দেশ পুনর্গঠন, সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা।
এক মাস পেরিয়ে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন ব্রেন্ট নেইম্যান। তার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জেরড ম্যাসন।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমর্থন পায় জো বাইডেন সরকারের। ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম… শিক্ষার্থীদের এই বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশা জাগানিয়া যুগের সূচনা করেছে।”
ড. ইউনূস বলেন, অর্থনীতি দ্রুত পুনর্গঠন, সংস্কার ও পুনরায় সচল করার পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভোট কারচুপি প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংশোধনের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করার কথাও জানান প্রধান উপদেষ্টা। আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ’ ব্যক্তিদের আত্মসাৎ করা ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়েও সরকার সচেষ্ট বলে জানান তিনি।
বাসস জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারলে ওয়াশিংটন আনন্দিত হবে, এমনটাই বলেছে মার্কিন প্রতিনিধি দল। তারা বলেছে, বাস্তবায়নাধীন সংস্কার কর্মসূচিতে প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী।
ঘণ্টাব্যাপী হওয়া এই বৈঠকে আর্থিকখাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার নিউ ইয়র্ক সফর নিয়েও আলোচনা হয়।
এদিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন, অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকীসহ কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব জসিম বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেসব বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে। বৈঠকে এ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।”
এই বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্র সচিব তাদের জানান, আর্থিক সংস্কারের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারে রয়েছে।
বৈঠকে আর্থিক এবং রাজস্ব খাতের সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতার ক্ষেত্র, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সমপরিবেশ, মানবাধিকার সুরক্ষা, রোহিঙ্গাসহ নানা ধরনের আলোচনা হয়েছে বলেও জানান জসিম।
দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত পেতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, “আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে আমরা কথা বলেছি। অর্থ পাচারসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষতা আছে, সেটা হয়ত আমরা ব্যবহার করব, তবে তার চূড়ান্ত রূপ পেতে কিছুটা সময় লাগবে।” বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠকে বিষয়গুলো সুনির্দিষ্টভাবে উঠে আসতে পারে বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব বিষয়ে সহযোগিতার কোনও আশ্বাস পেয়েছেন কি না- প্রশ্নে জসিম বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে চান জানিয়েছেন। এর প্রতিফলন হিসেবে সরকারের গঠনের দ্বিতীয় মাসেই তারা প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। অর্থিক খাত সংস্কারেও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রকে শ্রম আইন বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে জানানো হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা চলবে।