আ.লীগ আমলে আত্মীয়তার সূত্রে আর বর্তমানে বিএনপির পরিচয়ে চলছে অপকর্ম
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের নওয়াপাড়া বন্দরের ঘাট দখল, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসাসহ এমন কোন অপরাধ নেই করছেন না আসাদুজ্জামান জনি ও তার সাঙ্গাপাঙ্গা। ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে মিলেমিশে নির্বিঘ্নে অবৈধ কারবার করায় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আর ৫ আগস্টের পর বিএনপির পরিচয় বহন করে ধারাবাহিকভাবে সেই অপরাধ-অপকর্ম করে চলেছেন। যদিও জেলা বিএনপি স্থগিত করেছে জনির পদ-পদবী। কিন্তু তারপরও থেমে নেই জনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, জনির খুঁটির জোর কোথায় ?
অভয়নগরের নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সম্প্রতি পদ স্থগিত) আসাদুজ্জামান জনি। নওয়াপাড়া কেন্দ্রিক প্রায় সব অপকর্মেই এই নামটি জড়িত। একের পর এক দখল করে নিচ্ছেন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তার পালিত সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারছেন না। জনির সন্ত্রাসী বাহিনী মোটরসাইকেল গাড়ি নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিয়ে পুরো অভয়নগর জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী লালন, মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালানের অভিযোগ করা হয়েছে। ৫ আগস্টের আগে তিনি এসব কাজ করতেন আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলেমিশে।
সূত্র মতে, আসাদুজ্জামান জনির সাথে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার আত্মীয়তা রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক বাবুলের ভাগ্নিজামাই তিনি। সেই আত্মীয়তার সূত্র ধরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। নির্বিঘ্নে ঘাট দখল, মাদক ব্যবসা, বালির ব্যবসা করেছেন। গত বছরের ১৪ অক্টোবর আসাদুজ্জামান জনির নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল হানা দেয় সরকার গ্রুপের কার্যালয়ে। তারা বাকিতে তিন ট্রাক কয়লা দেওয়ার জন্য চাপাচাপি করতে থাকে। রাজি না হওয়ায় সাইদ সরকারের ওপর চড়াও হয় দুর্বৃত্তরা। এরপর দিন একটি লিখিত এজাহার দেন সরকার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সাইদ সরকার।
সম্প্রতি অভয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ্ খালিদ মামুনের সাথে ব্যবসায়ীক পার্টনার হয়ে জনি চেঙ্গুটিয়া এলাকায় সাধারণ বালি ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে পুরো বালির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। শাহ্ খালিদ মামুন অভয়নগর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীরের ভাই।
সম্প্রতি অভয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ্ খালিদ মামুনের সাথে ব্যবসায়ীক পার্টনার হয়ে জনি চেঙ্গুটিয়া এলাকায় সাধারণ বালি ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে পুরো বালির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। শাহ্ খালিদ মামুন অভয়নগর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীরের ভাই।

আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয় ও ছাত্রলীগ নেতা ব্যবসায়ীক পার্টনার হওয়ায় পুলিশ তার কিছুই করতে পারেনি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সবখানেই পরিবর্তন হয়েছে। শুধু হয়নি নওয়াপাড়ায় জনির লুটপাট, দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার পরিবর্তন। বিএনপির পরিচয়ে চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধ-অপকর্ম। বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ী ইসরাইলের কাদিরপাড়া গ্রামের বাড়ি জোর করে দখল, লুট ও অগ্নিসংযোগ, শহরের তালতলায় ‘ব্রাইট ঘাট’ জোর করে দখল, ওই সময় ঘাটের শ্রমিক সরদার জাকির ও শ্রমিক উজ্জ্বল মাসুদের বাড়ির গরু ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এছাড়া মাইলপোস্ট এলাকা থেকে ঠিকাদার নওশাদের এক ট্রাক পাথর লুটে নিয়ে বিক্রি করে দেয় জনির লোকজন। এরপর দিন ‘চাকলাদার ঘাট’ দখল এবং ৬০টি মোটর লুট ও মেহগনিগাছ লুট করা হয়।
৯ আগস্ট নওয়াপাড়া বাজারের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মৃত সিরাজুল ইসলাম খোকনের বাড়ির জমি দখল করে নেয় জনির লোকজন। শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপুর এলাকার আওয়ামী লীগ ক্যাডার নজরুল খানকে টাকার বিনিময়ে অফিস প্রতিষ্ঠিত করে দেন জনি।
অন্যদিকে, ১৭ সেপ্টেম্বর চেঙ্গুটিয়ার মোসলেম সরদারের মালিকানাধীন ‘রাজধানী ঘাট’ দখল করে জনির লোকজন।
এসব ঘটনায় বিব্রত অভয়নগর উপজেলা ও নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা জনির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা থেকে শুরু করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতৃত্বের শরণাপন্ন হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠনও নানা কর্মসূচি পালন করে চাঁদাবাজ, দখলদারদের শাস্তি দাবি করে। গত বছরের ২০ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আসাদুজ্জামান জনির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে পদ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করে যশোর জেলা বিএনপি। এরপর আর বেপরোয়া হয়ে উঠে জনি। পদ স্থগিত হলেও তার চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেমে নেই। জনি তার অনুসারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েই যাচ্ছে। জনির এমন কর্মকাণ্ডে অভয়নগর উপজেলা ও নওয়াপাড়া পৌর বিএনপি বিব্রত হলেও জেলা থেকে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে জনির খুঁটির জোর কোথায় ?
এ বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে দলের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। সে যদি কোন অপরাধ কর্মকাণ্ড করে থাকে তার ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।