নড়াইল প্রতিনিধি
এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখ হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন প্রেমিকার বাবা সবুর। হত্যার পর লাশ যেন শনাক্ত না হয় সেজন্য ব্যাটারির এসিড দিয়ে সিরাজের মাথার মাংস গলিয়ে দেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতে সিরাজ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন প্রেমিকার বাবা সবুর।
নিহত সিরাজ শেখ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের চরদৌলতপুর গ্রামের কৃষক শেখ ইকরাম আলীর ছোট ছেলে। তিনি চর দৌলতপুর সরস্বতী একাডেমি বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় তিনটি বিষয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
পুলিশ, স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার আগের রাতে প্রেমিকা ইয়াসমিনের ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে দেখা করতে যায় এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখ। এ সময় বাড়ির পেছনে ইয়াসমিনের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে সিরাজ শেখকে ধাওয়া করেন প্রেমিকার বাবা সবুর শেখ। সিরাজ দৌড়ে পালানোর সময় মেহগনি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে যান। তখন কোদালের হাতল দিয়ে সিরাজের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন প্রেমিকার বাবা সবুর শেখ।
একসময় সিরাজ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ওই রাতেই মারা গেছে ভেবে তার নিথর দেহ সবুর শেখ ঘাড়ে করে বাড়ির পাশে পুকুরের কচুরিপানার নিচে ঢেকে রাখেন। পরে বাড়ি আসার পরও সবুরের সন্দেহ হয় বেঁচে আছেন কিনা? কিছুক্ষণ পর গরু জবাই করা ছুরি নিয়ে আবার সেখানে গিয়ে সিরাজের নিথর দেহ কচুরিপানার নিচ থেকে বের করে মৃত্যু নিশ্চিত করতে জবাই করেন সবুর।
পরের দিন ৭ মে রাতে ঘরে থাকা ব্যাটারির অ্যাসিড নিয়ে সিরাজের মরদেহ পুকুর থেকে উঠিয়ে বিলের মধ্যে দিয়ে ২ কিলোমিটার দূরে শওকত হোসেন মিরুর আমবাগানে নিয়ে যান। লাশটি যেন শনাক্ত না হয় সেজন্য মরদেহ আমবাগানে ফেলে ব্যাটারির এসিড সিরাজের মাথায় ঢেলে মাথার মাংস গলিয়ে দেন সবুর শেখ।
নিখোঁজের ৫দিন পর ১০ মে বিকেলে ওই ইউনিয়নের শওকত হোসেন মিরুর আমবাগান থেকে সিরাজ শেখের বিকৃত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের ১৫ ঘণ্টা মধ্যে পুলিশ হত্যা রহস্য উন্মোচনে সক্ষম হয়। নৃশংস এ হত্যায় ব্যবহৃত গরু জবাইয়ের ছুরি ও রক্তমাখা কোদালের হাতলও উদ্ধার করা হয়।
মরদেহ উদ্ধারের পর নিহতের বাবা ১২ মে শুক্রবার রাতে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামি করে লোহাগড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় সিরাজের হত্যাকারী তার প্রেমিকার বাবা সবুর শেখসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সবুর শেখ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের চরদৌলতপুর গ্রামের সবুর শেখ, সবুর শেখের স্ত্রী শাহিনা বেগম, ছেলে জাহিদুল শেখ ও সিরাজ শেখের প্রেমিকা ইয়াসমিন খানম।
নড়াইলে অ্যাসিডে প্রেমিকের মাথা বিকৃত করেন প্রেমিকার বাবা
৮ Views