নড়াইল প্রতিনিধি
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনের কারণে নড়াইল জেলার তিন উপজেলার নদী তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর গ্রামীণ বসতবাড়ি, পাকা রাস্তা, কবরস্থানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়। এ বছরও জেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ায় অনেক বসতভিটা, রাস্তাঘাট ও স্থাপনা রক্ষা পেয়েছে। তবুও বরাদ্দের স্বল্পতার কারণে অনেক এলাকায় এখনো নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এলাকাবাসী জরুরি বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
নড়াইল জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা, মধুমতী ও চিত্রা নদীর দুই পাড়ে প্রতিবছর বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী সময়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। বিশেষ করে কালিয়া উপজেলার উথলী, চরমধুপুর; লোহাগড়া উপজেলার ইতনা, শালনগর, কোটাখোল, জয়পুর, মৌলভীধানাইড়, শিয়েরবর, রামকান্তপুর; এবং সদর উপজেলার রতডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকা নদীভাঙনের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিবছর এসব এলাকায় ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তা-ঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়। চলতি বর্ষাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে জেলার কিছু এলাকায় নদীভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, হঠাৎ করে কোথাও ভাঙন শুরু হলে তাৎক্ষণিক জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় সব স্থানে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার উথলী এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিন আগে ওই এলাকায় হঠাৎ নদীভাঙন শুরু হয়। সংবাদ পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষণিকভাবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার মাধ্যমে ভাঙন রোধ করে, ফলে গুরুত্বপূর্ণ বসতভিটা ও স্থাপনা রক্ষা পায়।
উথলী গ্রামের বাসিন্দা পান্নু শেখ বলেন, ‘নদীভাঙন শুরুর সাথে সাথে বালুর বস্তা ফেলার কারণে ভাঙন বন্ধ হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী এতে খুব খুশি।’
একই গ্রামের শিলা বেগম বলেন, ‘বালুর বস্তা ফেলার কারণে ভাঙন বন্ধ হয়েছে। এজন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে নবগঙ্গা নদীর স্রোত এখন অনেক বেশি, এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানাই।’
নদীপাড়ের আরেক বাসিন্দা সাকিরুন নেছা বলেন, ‘আধা ঘণ্টার মধ্যে নদীভাঙনে আমার দুইটি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরদিন থেকে সরকার জরুরি ভিত্তিতে কাজ করায় এখন ভাঙন বন্ধ হয়েছে। তবে আমরা এখনও আতঙ্কে আছি। আমরা চাই নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক।’
চিত্রা নদীর ভাঙনকবলিত রতডাঙ্গা গ্রামের সাহাবুদ্দিন জানান, ‘আমাদের এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে কাজ করেছে। এতে আমার বাড়িসহ আশপাশের এলাকা রক্ষা পেয়েছে। আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট মো. তারিকুজ্জামান লিটু বলেন, ‘নড়াইল জেলার ওপর দিয়ে যেসব নদী প্রবাহিত, বর্ষা মৌসুমে সেগুলোতে ভাঙন দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় অনেক সময় ব্যবস্থা নিতে পারে না। এজন্য জরুরি কাজের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—ভাঙনকবলিত এলাকায় জরিপের মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড, নড়াইল-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, ‘প্রতি বছরই নদীর স্রোতের কারণে ভাঙন দেখা দেয়। সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে দ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমাদের সীমিত বাজেট ও সম্পদের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। কাজের মান নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক বিষয়টি তদারকি করে। মানের ক্ষেত্রে আমরা কোনো আপোষ করি না। ইতিমধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকায় স্থানভেদে নির্দিষ্ট নকশা অনুযায়ী স্থায়ী কাজের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে নড়াইলের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শারমিন আক্তার জাহান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর একযোগে কাজ করছে।’