নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহরের আরএনরোড এলাকায় একটি বাড়িতে গৃহ পরিচালিকার কাজ করেন তহমিনা খাতুন। স্বামী দিনমজুর। অসুস্থতার কারণে এখন আর আগের মত কাজ করতে পারেন না তিনি। তিন সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে লেখাপড়া করেন। অন্যটি এখনও ছোট। পড়ালেখা করা দুই মেয়েই আগামি নতুন বছরে নতুন ক্লাসে উঠবেন। দুই মেয়েরই ছিড়েছে স্কুল ড্রেস, ব্যাগ। নতুন বছরে নতুন ক্লাসে যাওয়ার আগে মেয়েদুটিকে নতুন ড্রেস, ব্যাগ কিনে দেওয়া তহমিনার জন্যে বেশ কষ্টকর। তার দুই সন্তানের হাতে রঙিন নতুন জামা, স্কুল ব্যাগ তুলে দেওয়া হয়েছে। একই সাথে নতুন ক্লাসে ভর্তি হওয়ার জন্য দুই মেয়েকে দেওয়া হয়েছে ছয় হাজার টাকা। নতুন ক্লাস শুরুর আগে নতুন জামা ব্যাগ পেয়ে ওই দুই শিশু ভীষণ খুশি। শুধু ওই দুই শিশু নয়, তাদের মত শহরের হতদরিদ্র পরিবারের দেড়শ’ শিশুর হাতে রঙিন দুই জোড়া করে নতুন জামা, একটি ব্যাগ ও স্কুলে ভর্তি হতে তুলে দেওয়া হয়েছে তিন হাজার টাকা। শনিবার বিকালে শহরের নলডাঙ্গা রোডস্থ রিপন রিপন অটোস প্রাইভেট লিমিটেডের মিলনায়তনে আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউটের আয়োজনে সর্বজনীন শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। এসময় এসব শিশুদের পড়াশোনা নিশ্চিত করতে মাসিক এক হাজার টাকা করে শিক্ষা বৃত্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন আয়োজকরা।
তহমিনা খাতুন বলেন, ‘স্বামী আরএন রোডে একটি দোকানে লেবারের কাজ করেন। তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে। দুই মেয়ের জামা ব্যাগ নিয়ে বায়না ধরে ছিলো। কিন্তু কিনে দেওয়ার সামর্থ্য ছিলো না। কিন্তু দুই মেয়ে স্কুলে যাওয়ার আগে নতুন জামা, ব্যাগ আর ভর্তির টাকা পেয়ে অনেক খুশি। একই সাথে আমার চিন্তাটাও দূর হলো আজ।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে এসব শিশুদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নার্গিস বেগম। যশোর পৌর ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের মহল্লা সুরক্ষা কমিটি আহ্বায়ক খান মোহাম্মদ শফিক রতনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি ও প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সাধারণ সম্পাদক তানভিরুল ইসলাম সোহান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোকছেদ আলী, সাবেক কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মাছুম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক কাসেদুজ্জামান সেলিম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা, রিপন অটোস ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আইয়াজ উদ্দীন রিপন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রিপন অটোস প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইজাজ উদ্দিন টিপু।
নতুন ব্যাগ জামা পেয়ে খুশি ফারিহা আক্তার উষা। চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠা এই শিশু বলেন, ‘বাবা একটি দোকানে কাজ করেন। মা বাড়িতে গৃহিনী। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন ব্যাগ ছিড়ে যায়। ছিড়ে যাওয়া ব্যাগ সেলাই করেই স্কুলে যেতাম। এবার মাকে বলেছিলাম নতুন ব্যাগ কিনে দিতে; কিন্তু দিবে বলে জানায় তারা। এখন এনারা দুই সেট নতুন জামা, ব্যাগ আর স্কুলে ভর্তির জন্য টাকা দিয়েছে। নতুন বইয়ের সঙ্গে ব্যাগে জামা পড়ে স্কুলে যাবো, ভাবতে পেরে আমার খুব আনন্দ লাগছে। ফারিহার মা সাজেরা খাতুন বলেন, ‘গরীব মানুষ হওয়াতে ঠিক মতো বাচ্চাদের শখ মেটাতে পারি না। নতুন ব্যাগ পেয়ে বাচ্চাটা খুব খুশি। আয়োজকরা জানিয়েছে, প্রতিমাসে এক হাজার করে শিক্ষাবৃত্তিও দিবে।’
যশোর রিপন অটো প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত একটি সামাজিক সংগঠন আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউশন। আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আইয়াজ উদ্দীন রিপন জানান, ‘২০০৫ সাল থেকে আসাদ স্মৃতি সামাজিক কাজ করে আসছে। আসাদ স্মৃতি ইন্সটিটিউটের তত্ত্বাবধানে এখন পর্যন্ত ৬০০জন নারীকে ফ্রিতে কুরআন শিক্ষা, ১০০শ উপর নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বয়স্ক ভাতা হিসেবে ১৮ লাখ প্রদান করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এসব শিশুদের দুই সেট নতুন পোশাক, স্কুলে ভর্তির জন্য তিন হাজার করে টাকা ও একটা ভালো মানের স্কুল ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। এসব শিশুদের লেখাপড়া যাতে বন্ধ না হয়; প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তিও দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য যার যার অবস্থা থেকে যদি এগিয়ে আসে; তাহলে সমাজে আর বৈষম্য থাকবে না।’
