নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আগামী ১২ জুলাই। দীর্ঘ ১৭ বছর পর সম্মেলন ঘিরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সম্মেলন স্থল যশোর ঈদগাহ ময়দান সাজানো চলছে নান্দনিকভাবে। পদপ্রত্যাশীরা শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন প্রান্তে প্যানা টাঙিয়ে সম্মেলনের সফলতা কামনা করেছেন। প্রধান প্রধান সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন তোরণ। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পছন্দের নেতাকে নিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। শীর্ষ পদে আসতে কেউ কেউ কেন্দ্রে তদবির করছেন। যোগাযোগ বাড়িয়েছেন সম্মেলনের কাউন্সিলর ও নিজ নিজ বলয়ের নেতাদের সাথে।
যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আসাদুজামান মিঠু বলেন, এই সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১০ হাজার কর্মীসহ অন্তত ২৫ হাজার মুজিব আদর্শের নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন ৫০০ জন কাউন্সিলর। উদ্বোধন হবে যশোর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়েবসাইট। একটি ব্যতিক্রমী স্মার্ট সম্মেলন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাসিম।
সর্বশেষ ২০০৬ সালে যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আসাদুজামান মিঠুকে সভাপতি ও অধ্যক্ষ নূরে আলম সিদ্দিকী মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। মেয়াদোত্তীর্ণের পর গত বছরের ২৮ জুন ভেঙে দেয়া হয় কমিটি। এরপর নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ওই সম্মেলন সফল করতে সাবেক সভাপতি আসাদুজামান মিঠুকে আহ্বায়ক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নুরে আলম সিদ্দিকী মিলন ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ইমামুল কবীরকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ জুলাই সম্মেলন হতে চলেছে।
এদিকে, সম্মেলনে নেতৃত্বে আসতে বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। সভাপতি পদে সাবেক সভাপতি আসাদুজামান মিঠু ছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মোস্তফা কামাল প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সভাপতি পদে প্রার্থী হতে শহরময় পোস্টার দিয়েছেন নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবির তুহিনও।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থীতা থেকে সরে আসতে পারেন। তিনি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ইমামুল কবীরকে এ পদে সমর্থন দিবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া অনেক আগে থেকেই সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হতে মাঠে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এসএম নিয়াতম উল্লাহ। শোনা যাচ্ছে লেবুতলা ইউপির চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলনের নামও।
এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পুরনোরাই থাকছেন নাকি নতুন মুখ আসছে তা নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা। তৃণমূলের অনেকে বলছেন, নতুন নেতৃত্বের বিকাশ হওয়ার দারকার। আবার কেউ কেউ বলছেন নতুন পুরাতন মিলে কমিটি হলে সংগঠনে গতিশীলতা বাড়বে।
নেতাকর্মীদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়াতে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির শীর্ষ পদধারীদের ছাড়া অন্যরা সক্রিয় না। তাই সংগঠনের গতিশীলতার প্রয়োজনে আগামী সম্মেলনে তারুণ্য নির্ভর একটি কমিটি উপহার দেবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। যারা আগামী সংসদ নির্বাচনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখবে।
এই বিষয়ে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক ও জেলার সাবেক সভাপতি আসাদুজামান মিঠু বলেন, দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসব উদ্দীপনা বিরাজ করছে। নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামী নির্বাচনে সরকারের যে প্রতিপাদ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন; সেই স্মার্ট সুখি দেশে স্বেচ্ছাশ্রম নিয়ে যাবে যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
সভাপতি প্রার্থী ও সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির তুহিন বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী ৬টি সংগঠনের একটি। আমাদের কমিটি হবে যুবলীগ আর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিযোগিতা। আওয়ামী লীগের পরের অবস্থান হবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের। কিন্তু দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়াতে আর সভাপতি-সম্পাদক একনায়কতন্ত্র থাকাতে দলীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। জেলার সঙ্গে উপজেলার কমিটিগুলোরও ভঙ্গুর দশা। আমরা চাই নতুন মুখ, নতুন প্রজন্ম। কিন্তু তারা কেউ পদ ছাড়তে চাইছে না। সাবেক সভাপতি মিঠু জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তারপরেও আবারও নতুন করে সভাপতি হতে চায়। তার উচিত ছিলো নতুন প্রজন্মের হাত দিয়ে নতুনভাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা।
আরেক সভাপতি প্রার্থী মোস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নজর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই যাত্রায় আমি তার একজন কর্মী হয়ে এ জেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগকে স্মার্ট ভাবে গড়ে তুলতে চাই। সভাপতি হতে পারলে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি ছাড়াও নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে জনগণের জন্য স্বেচ্ছাসবক হয়ে পাশে থাকবো।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এসএম নিয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণের দীর্ঘদিন পর নতুন করে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণাতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অনুরোধ থাকবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে নতুন নেতৃত্ব গঠনের। আগামীতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ন্যায় যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ হবে শক্তিশালী। তিনি বলেন, সিনিয়ররা যদি জায়গা না ছাড়েন নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে না। যারা সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আছেন তাদের কাছে প্রত্যাশা নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে গড়ে উঠুক যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ।
সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শেখ ইমামুল কবীর বলেন, সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনস্থল ঈদগাহ ময়দানকে সাজানোর কাজ চলছে। সম্মেলন ঘিরে শহরে সাজ সাজ রব ভাব। মঞ্চের কাজও এগিয়ে চলছে। এখন শুধু অপেক্ষা ১২ জুলাইয়ের।