জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: যশোরের ঐতিহাসিক টাউনহল ময়দানে জরাজীর্ণ ‘স্বাধীনতা মঞ্চ’ আধুনিকায়ন ও মাঠ সংস্কার কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত হয়ে আরও একটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হলেন কিংবদন্তি আলোকচিত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ রায়হান। বিজয়ের চারদিন আগে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর এইদিনে মুজিবনগর সরকার প্রথম জনসভা করে এই মঞ্চে। সেদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সেই জনসভার ছবি তুলে ইতিহাসের স্বাক্ষী হন আবদুল হামিদ রায়হান।
রবিবার বিকেলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি ইতিহাসের সাক্ষী আবদুল হামিদ রায়হানের হাত ধরে শিলান্যাসের পর্দা তুলে পুরো অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি থাকবে সেখানটা সংরক্ষণের নির্দেশ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভার এই মঞ্চটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবে।
এ সময় জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সেই স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত হয়ে সেদিনের স্মৃতিচারণ করেন আবদুল হামিদ রায়হান। তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারের হেডকোয়ার্টার্স ছিল কলকাতার থিয়েটার রোডে।
১১ ডিসেম্বর যশোর টাউন হল মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, কামারুজ্জামান, জহির রায়হান সাহেবদের আসার খবরে দুপুর থেকে মাঠে লোকজন আসতে শুরু করে। বিকাল ৪টার দিকে তারা জনসভাস্থলে পৌঁছান।
মাঠ ছিল ছোট, জনসভায় সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতি ঘটে। হানাদারমুক্ত বাংলার প্রথম জনসভায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এই মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’ সেদিন তিনি সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ওই জনসভায় আমি ইয়াসিকা ৬৩৫ মডেলের ক্যামেরায় ঐতিহাসিক জনসভার ছবি তুলেছিলাম, যা গোটা বিশে^র বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়েছিল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের প্রথম কোনসভার স্থিরচিত্র যিনি ধারণ করেছিলেন; তার মুখে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় সেইদিনের বিবরণ শুনে উপস্থিত অনেকেই আপ্লূত হন।
এদিকে স্বাধীনতার ৫১ বছর পর যশোরবাসী তাকে সংবর্ধনা দেয়ায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি স্মরণীয় দিন।
সেই জনসভায় বিদেশি কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, আমার ছবি বিদেশের অনেক গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছিল। আবেগাপ্লুত হয়ে আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে গরুর দুধ খাইয়েছি। শেখ হাসিনার আবদার মেনে ১০টি গোলাপের গাছ পাঠিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে।
সেই বঙ্গবন্ধুকে যারা খুন করেছে, স্বাধীনতাকে যারা স্বীকার করে না-তাদের সাথে কোনো আপোষ নেই। কিংবদন্তি এই আলোকচিত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের প্রতিহত করতে হবে।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে সংবর্ধিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর প্রধান আলী হোসেন মনি, ডেপুটি প্রধান রবিউল আলম, যশোর ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য আবুল ইসলামের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির।
সবশেষে মঞ্চে উপস্থিত সবার গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দেন যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু। এরআগে আলোচনা সভায় তিনি স্বাগত বক্তব্য দেন।