- বাড়িঘরের আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিস বাজার দরের আগুন নেভানোর কেউ নেই?
- সংকটে নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষ
- আজ ব্যবসায়ী সমিতির সাথে বাজার পরিদর্শকের বৈঠক
সুনীল ঘোষ: সবকিছুতে লাগামহীন। নিত্যপণ্যের বাজারে রীতিমত আগুন জ¦লছে। বাড়ি-ঘরে আগুন লাগলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস কিন্তু বাজারের আগুন নেভানোর কেউ নেই। মানব সৃষ্ট আগুন ছাড়ছে না কারোর। পুড়ছেন সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ। সংকটে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের মানুষ। প্রভাব পড়েছে হোস্টেল-মেসগুলোতেও। এভাবেই ক্ষোভের আগুন ঝাড়লেন চাকরিজীবী আব্দুর রশিদ, হোস্টেল ছাত্রী রুপা ও রিকশাওয়ালা করম আলী।
শুক্রবার নিত্যপণ্যের বাজার দর জানতে দৈনিক কল্যাণ থেকে যাওয়া হয় যশোর বড় বাজারে। কথা হয় বেশ কয়েকজন ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে। বাজার দর পরিস্থিতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ক্ষোভের আগুন ঝাড়েন রিকশা চালক করম আলী। তিনি মণিরামপুরের বাসিন্দা। দিনভর রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত দেহ নিয়ে রাতে বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, বাজারে আগুন জ্বলছে কিন্তু নেভানোর কেউ নেই।
কথোপকথনের একপর্যায়ে বলেন, কতদিন মাংস খাইনি তা মনে পড়ে না। আজ একটু রোজগার হয়েছে। তা থেকে ১শ’ টাকায় হাফ কেজি পোল্ট্রির মাংস কিনেছেন। মুরগীর চামড়া, গিলে, মাথা ও পাসহ মুরগীর উচ্ছিষ্ঠাংশ ১শ’ টাকায় কিনেছেন আরও এক কেজি। তিনি বলেন, অনেকদিন পর বাচ্চাদের মুখে এক টুকরো মাংস তুলে দিতে দিনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আয়-রোজগার যা হয় তা দিয়ে ডাল-ভাত খাওয়াও কঠিন।
আব্দুর রশিদ বলেন, বেসরকারি একটি সংস্থায় চাকরি করি। পুরো নাম-পরিচয় জানাতে তিনি নারাজ। চাকরিতে সমস্যা হতে পারে। কম বেতনের কথা পত্রিকায় আসলে সংস্থাটি ছাটাই করতে পারে জানিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় প্রশ্ন করেন দাম বাড়েনি কিসের ?
কজেল ছাত্রী রুপা থাকেন যশোর শহরের একটি ছাত্রী মেসে। তিনি ৪৫ কেজি দরে মোটা চাল কেনেন ২০ কেজি। মুদিপণ্য কেনেন আরও দেড় হাজার টাকার। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন-মেস জীবন চরম সংকটে পড়েছে। তিনি জানান-চাল, ডাল, তেল, গ্যাস, আটা, চিনি, মাছ, ডিম থেকে শুরু করে শাক-সবজির দাম বাড়ছেই। এমন কোনো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই, যার দাম বাড়েনি বা বাড়ছে না। মৌসুমী সবজির বাইরেও বাজারজুড়ে হাইব্রিড শাক-সবজির উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু আকাশ ছোঁয়া দাম কমেনি।
সবজি ক্রেতা রহমত আলী জানান-বাজার ভেদে সবজির দাম কম-বেশি আছে। তিনি বলেন-যে সবজি বড়বাজারে ৩০ টাকা কেজি সেই সবজি স্টেশন, চুয়াডাঙ্গা বাজার ও খয়েরতলায় ১৫ থেকে ২০ টাকায় পাওয়া যায়। তিনি বলেন, চুড়ামনকাঠি ও সাতমাইল বাজার দরের সাথে মেলে না শহরের কোনো বাজারের দাম। তিনি বলেন, গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বিপাকে পড়েছি। সন্তানদের ভাল স্কুলে পড়ানোর প্রত্যাশায় তিনি হৈবতপুর ছেড়ে ২০১৭ সালে শহরে আসেন। তিনি বলেন, কৃষক দাম পায় না। মধ্যস্বত্তভোগীদের পেটভরে কৃষকের ঘামে। তার ভাষ্যমতে-এখনো কৃষক আলুর কেজি ৮/১০ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারেননি। কিন্তু কয়েক কিলো দূরের বাজারে এসে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। সীম, মিষ্টি আলু, গাজার, পালঙ- সবুজ ও লাল শাক এখনো গ্রামে গরু ছাগলে খাচ্ছে অথচ শহরে কিনে খেতে হচ্ছে প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
বাজার ঘুরে দেখা যায় অভিযোগের সত্যতা আছে। বড়বাজারে কাকলে সীম এখনো ৫০/৬০ টাকা এবং ঘি কাঞ্চনসহ অন্যান্য প্রজাতির সীমের কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। আলু (প্রজাতি ভেদে) ১৫ থেকে ২৫ টাকা, গাজর ২০ থেকে ৩০ টাকা, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন প্রকার ভেদে ৩০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাতা কপির (কেজি ওজন) পিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। মেটে আলুর কেজি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বছরভর ফুলকপি পাওয়া গেলেও দামে হেরফের হয়নি। ৫০ টাকার নিচেই ফুলকপি পাওয়া যায়নি। অন্যান্য সবজির দরেও একই অবস্থা। এখন পর্যন্ত কাচা মরিচ ও রসুনের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
সবজি বিক্রেতা রজব আলী, নিয়ামত আলী ও রফিক জানান, তারা আড়ত থেকে কিনে বাজারে বসে বিক্রি করেন। কৃষকরা আড়তে কত দামে দেয়, তা আমরা বলতে পারবো না। আড়তের পাইকারী দরের উপর নির্ভর করে খুচরা বেচাবিক্রিতে। তাদের দাবি সকালের দিকে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। দুপুরের দিকে প্রতিকেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা নেমে বিক্রি করা হয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল এবং সন্ধ্যা ৭ টাকা পর্যন্ত ক্রেতার ভীড় জমে। এ সময় দাম একটু বাড়ানো হয়। রাত ৮টার পর উদ্বৃত্ত সবজি কেনা দামের চেয়েও কমে বিক্রি করতে হয়। তারপর লাভ-লোকসানের হিসাব করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক সবজি বিক্রেতা বলেন, ক্ষেত থেকেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সবজি কিনে আড়তে নিয়ে আসেন। আড়তদার কমিশন কেটে তুলে দেন খুচরা বিক্রেতাদের হাতে। কয়েক দফা হাত বদলের কারণে প্রকার ভেদে সবজির দাম দ্বিগুণ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
মাংসের বাজারেও উর্দ্ধগতির চিত্র পাওয়া গেছে। বাজার ঘুরে জানা যায়-দেশি মুরগি, পোল্ট্রি, সোনালী, কক, খাসি ও গরুর মাংসে গত ৬ মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে পোল্ট্রির মাংস (প্রস্তুতকৃত) প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে ২শ’ ১০ টাকা পর্যন্ত। সোনালী মুরগির কেজি কিনতে হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। ককের দামও বেড়েছে। খাসির মাংস প্রতিকেজি বিক্রি করা হচ্ছে সাড়ে ৭শ’ থেকে শুরু করে সাড়ে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত। গরুর মাংসের দাম বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৬শ’ টাকা। সময়ের হেরফেরে দাম উঠা-নামা করে। রাতে দাম কিছুটা কমে আসে।
মুরগির মাংস বিক্রেতা রহমান জানান-শুধু মুরগিতেই না, গত ৩ মাসে প্রতিকেজি মাংসে দাম বেড়েছে ৫০ টাকা থেকে দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত।
দিদার আহমেদ নামের এক মাংস ক্রেতা জানান, খাসি-গরুর দাম বৃদ্ধির কারণে পোল্ট্রি মুরগী খাচ্ছিলাম কিন্তু ১২০ টাকা কেজির পোল্ট্রি এখন কিনতে হচ্ছে ২শ’ টাকার উপরে। তিনি বলেন-সাড়ে ৬ টাকার ডিম এখন কিনতে হচ্ছে ৯টা দরে। শহরে পাড়া-মহল্লার দোকানে আরও বেশি দাম নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আর কিছুদিন পর হয়তো সন্তানদের ডিমও খাওয়াতে পারবো না। তিনি বলেন-দুঃখের কথা বলতে গেলে দিন শেষ হয়ে যাবে। এখন এক পোয়া পুটি মাছের দাম উঠেছে ১২৫ টাকায়।
দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন বারান্দিপাড়ার দিদার আহমেদ। পেশায় তিনি কী প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন-দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যাঁতাকলে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। তিনি বলেন-এখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। খোলা সয়াবিন কিনতে হচ্ছে ১৭৫ টাকা কেজি। মাসখানেক আগেও লুজ তেলের কেজি ছিল ১৫৪ টাকা।
চাঁচড়া বর্মনপাড়ার অনিল বর্মন নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন-তেল গ্যাস থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। সাধারণ মানুষ অসাধারণ হতে পারছে না বলে তাদের কষ্টের সীমা নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরায়-প্রবাদটি আজ চরম সত্য হয়ে ঘাড়ে বসেছে বলেও মন্তব্য করেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন-মেয়ে কলেজে পড়ে। গত ৬ মাসে মেস খরচ বেড়েছে সাড়ে ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। এর আগে দুই হাজারে মেস খরচ উঠে যেতো কিন্তু এখন প্রায় ৩ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন-গত ৬ মাসে গ্যাসের দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। সাড়ে ৩ টাকায় গ্যাস ব্যবহার শুরু করেছিলেন দাবি করে এই স্কুল শিক্ষক বলেন, এখন সাড়ে ১২শ’ থেকে সাড়ে ১৪শ টাকা গ্যাস সিলি-ার কিনতে হচ্ছে।
শংকরপুর মুরগি ফার্ম এলাকার গ্যাস বিক্রেতা আকরাম হোসেন বলেন-দাম আরও এক দফা বেড়েছে। তবে এখনো আমরা সাড়ে ১২শ’ টাকায় বাড়িতে সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছি।
সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলহাজ বলেন, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের চড়া মূল্যের বিরূপ প্রভাব পড়েছে অতিদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। আলু ছাড়া সব পণ্যের দাম বেশি। যে কারণে নিম্ন আয়ের লোকজন আলু খাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যাঁতাকলে অসহায় মানুষের দুঃখের কথা বলার কোনো জায়গাও নেই। তিনি আরও বলেন-করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কিছু কিছু কর্মক্ষেত্রে কাজের সঙ্কোচন ঘটেছে। ফলে উপার্জন প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। এ অবস্থায় বাজার দরের লাগাম টেনে ধরতে সরকার ব্যর্থ হলে অনেকের পক্ষেই সংসার চালানো দায় হয়ে পড়বে। তিনি হুদা জগমানপুরের বাসিন্দা। সরকারি চাকরি থেকে বছরখানেক আগে অবসর নিয়েছেন।
বড়বাজারের হাটখোলা রোডে দেব এন্টারপ্রাইজ। বিক্রি করেন নিত্যপণ্য। প্রতিষ্ঠানটির মালিক কৃষ্ণ পাল জানান, বর্তমানে ৩শ টাকা কেজির জিরা ৩৬০, সাড়ে ৮শ’ টাকার লবঙ্গের কেজি সাড়ে ৯শ থেকে হাজার টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। ৩শ’ টাকা কেজির দারুচিনি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ’ টাকা। ৫২/৫৫ টাকা কেজি দরের চিনি ক্রেতার হাতে পৌঁছাচ্ছে ৭৫ টাকায়। গোলমরিচের দামও বেড়েছে। এখন প্রতিকেজির দাম হয়েছে সর্বনি¤œ সাড়ে ৬শ’ টাকা। প্রতিকেজিতে বেড়েছে ১শ’ থেকে দেড়শ’ টাকা। নেপাল, ভুটান ও ভারত থেকে আসা মোটা প্রকৃতির মসুরির ডালের দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪৪ টাকা। মাস তিনেক আগে এই ডালের কেজি ছিল ৫৪ টাকা। তিনি বলেন, একমাত্র দাম কমেছে এলাচের। ৬ মাস আগে প্রতিকেজি এলাচের দাম ছিল ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এখন দাম কমে হয়েছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।
মা জয় তারা স্টোরের মালিক কিশোর কুমার জানান, সবপণ্যেরই দাম বেড়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খোলা তেলের দাম। বর্তমানে প্রতিকেজি সয়াবিন তেল ক্রেতার হাতে পৌঁছাচ্ছে ১৭৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে খুচরা তেল বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিকেজি ২শ’ টাকায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলস্টেশন বাজারের মুদি দোকানী বলেন-এখানে দোকান প্রতি খাজনা দিতে হয় ৩০ টাকা। অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে দোকান ভাড়া। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা যেমন ক্ষিপ্ত, তেমনি আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছি। অনেকে দাম শুনে খালি প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, শুকনো ঝালের কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩শ’ টাকা। গত বছরেও এর দাম ছিল সর্বোচ্চ দুইশ’ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক-বড়বাজারের জনৈক পাইকারী দোকানি বলেন-২০২০ সালে সয়াবিন তেল প্রতি কেজির পাইকারি দাম ছিল ৮৮ টাকা, ২০২১ সালে ১১৫ টাকা, ২০২১ সালে ১৬০ টাকা ও ও চলতি বছর বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৭৫ টাকা। ২০২০ সালে পাম ওয়েল ছিল ৬৪ টাকা ৫০ পয়সা ২০২১ সালে ৯০ টাকা ও বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ১৪৯ টাকা দরে। ২০২১ সালে মোটা মসুর ডালের দাম ছিল প্রতিকেজি ৫৪ থেকে ৬৮ টাকা। চলতি বছর গত ৬ মাসের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। ২০২১ সালে দেশি মসুর ডালের দাম ছিল ৯২ টাকা, বর্তমানে ১২০ টাকা। ২০২১ সালে বিদেশি চিনির দাম ছিল ৫৬ টাকা, বর্তমানে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় কিনছেন খুচরা ক্রেতা। ২০২১ সালে আটার দাম ছিল ২২ টাকা। চলতি বছর বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩১ টাকা। প্যাকেট আটার দাম আরও বেশি।
ওষুধ বিক্রেতা ওমর আলী জানান, অর্ডার দিয়েও মিলছেন মৌসুমী সর্দির নাকের ড্রপ স্কয়ার কোম্পানির এন্টাজল। বেক্সিমকোর নাপার খোঁজ মিলছে না। নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, বক্সে রেট লিখে সাপ্লাই করছে কোম্পানি কিন্তু পাতায় দাম থাকছে না। এতে ক্ষেত্র বিশেষ ক্রেতা ঠকছেন। তিনি বলেন, শিশু খাদ্য প্রতিটি কোম্পানির দুধের দামও বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে।
বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সরকারের খাদ্যবান্ধর কর্মসূচি চালু রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ১০ টাকা কেজি দরে কিছু চাল পাচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষ। প্রত্যেকটি পৌর এলাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডিলারের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চাল-আটা বিক্রি করছে সরকার কিন্তু কোনভাবেই বাজার দরের উর্দ্ধগতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। নেপথ্য কারণ হিসেবে অনেকেই অভিযোগ করছেন-বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং নেই। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছে। ক্রেতা সাধারণের পকেট কেটে তারা বাজার দরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাশাপাশি পকেটভারি করছে।
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মর্জিনা আক্তার কল্যাণকে বলেন-মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। এটি অন্যতম কারণ। মধ্যসত্ত্বভোগী চক্রের দাপট তো রয়েছেই।
সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাঠ ও বাজার পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নিয়মিত মনিটরিং করছি। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মীর মোশারফ হোসেন বাবুর সাথে কথা হয়েছে। শনিবার বৈঠক করে বাজার দর নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, পণ্যের দামের তালিকা দোকানে ঝুলিয়ে রাখার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে।