নিজস্ব প্রতিবেদক
সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্র মতে, সরস্বতী পুজোর দিন বিদ্যারম্ভের জন্য শ্রেষ্ঠ। সনাতন ধর্মীয় বাঙালি সমাজে হাতেখড়ির মাধ্যমে বিদ্যারম্ভের সূচনা করা হয়। এদিন পুজোর পর মা, বাবা অথবা পুরোহিত শিশুর হাত ধরে স্লেটে ‘অ, আ, ক, খ’ লিখিয়ে অক্ষর পরিচয় করান। এই হাতেখড়ির প্রথার শিক্ষার জগতে প্রবেশ করে সেই শিশু। এমনই প্রথায় যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রমে হাতেখড়ি দিল আড়াই বছরের শিশু শ্রেয়া। মা- বাবাকে পাশে বসিয়ে পাশে বসিয়ে শ্রেয়াকে কাঠের স্লেটে খড়িমাটি (চক) দিয়ে ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ’ লিখে বিদ্যারম্ভের সূচনা করে দিলেন আশ্রমের সহসম্পাদক স্বামী আত্মবিভানন্দ মহারাজ। শ্রেয়াসহ প্রায় ১৫ জন শিশু আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাজীবন শুরু করলো এদিন।
এদিকে পথ আল্পনা, বাণী অর্চনা, পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণসহ নানা আয়োজনে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উদ্যাপন করা হয়েছে। বুধবার সকালে প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ। পূজা উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যেখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি সবচেয়ে বেশি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অসাম্প্রদায়িক নেতা। যিনি বাঙালী মুসলিমদের বাঙালী, বাঙালী হিন্দুদের বাঙালী, বাঙালী খৃষ্টানদের বাঙালী, বাঙালী বৌদ্ধদের বাঙালী বানিয়েছেন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা চাই, এখানে সকল ধর্মের মানুষ পারষ্পারিক সোহার্দ্য সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করবে।
যবিপ্রবি পূজা উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডা. মিলন কুমার বসু। আরও বক্তব্য দেন যবিপ্রবির প্রধান চিকিৎসক ডা. দীপক কুমার মন্ডল, সহকারী অধ্যাপক তরুন সেন।
এছাড়া বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী পূজা। সনাতন ধর্মবিশ্বাসীদের বাসাবাড়িসহ সারাদেশের সাথে যশোরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে এবছরও আইনজীবী সমিতির ১ নম্বর ভবনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর এখানে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, যশোর জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন, জেলা আইনজীবী ভবন, যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিমন, বেজপাড়া পূজা মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এসব স্থানে সনাতনী শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন হয়েছে।
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে সরস্বতীয় পুজোয় ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার। যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন, যশোর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ।