রায়হান সিদ্দিক
আঁধার কাটিয়ে আলোকিত শহর গড়ার কাজ করছে যশোর পৌরসভা। ‘আলো বেশি, খরচ কম’ নীতিতে পৌর এলাকায় ৬টি টাওয়ার লাইট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ৩টি টাওয়ার লাইট স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টায় টাউন হল মাঠে একটি টাওয়ার লাইটের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। যার আলোয় আলোকিত হয়েছে আশপাশের এলাকা। আলোর নান্দনিকতায় অন্যরকম পরিবেশ পেয়েছে রাতের যশোর।
খোঁজ নিয়ে যায়, এক সময়ের বাল্বের আলো সড়ক দ্বীপে পৌঁছে যেন আঁধার কাটাতো পারতো না। তাই রাতের শহরকে দিনের পরিবেশে রূপ দিতে নান্দনিক স্ট্রিট লাইট লাগানোর উদ্যোগ নেয় পৌরসভা। আর বর্তমানে পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ৬টি স্থানে ৬টি টাওয়ার লাইট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যশোর পৌরসভা। যার মধ্যে ২৪ লাখ ৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩টি টাওয়ার লাইট স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো বসানো হয়েছে শহরের দড়াটানা, মনিহার ও মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দানে। দ্রুতই আরও ৩টি টাওয়ার লাইট বসানো হবে বলে জানা গেছে। যার আনুমানিক বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। বাকি ৩টি লাইট বসানো হবে শহরের চাঁচড়া মোড়, নিউমার্কেট ও পালবাড়ি এলাকায়। এতে শহর আলোকিত হবে। চুরি, ছিনতাই কমবে। পাশাপাশি এইখাতে পৌরসভার ৪০ শতাংশ খরচ কমবে বলে মনে করছেন পৌরকর্তৃপক্ষ।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) শিকদার মোকলেচুর রহমান জানিয়েছেন, একটি টাওয়ার লাইট ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে আলো দিচ্ছে। এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন বাড়ছে তেমনি পৌরসভার খরচও কমছে। একটি টাওয়ার লাইট দেয়ার ফলে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি স্ট্রেট লাইট আমরা খুলে ফেলতে পারছি। যার ফলে এইখাতে আমাদের খরচ ৪০ শতাংশ কমেছে।
তিনি আরও বলেন, টাওয়ার লাইট স্থাপনে খরচ কিছুটা বেশে হচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু এই লাইট দেয়ার কারণে উপকারিতা অনেক বেশি পাচ্ছি। লাইট অনেক উঁচুতে থাকায় মাদকসেবী বা ছিনতাইকারীরা এটি ভাঙ্গতে পারছে না। রাতের বেলা আলোর কোন ঘাটতি থাকছে না। ফলে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারছেন।
পৌরসভার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে পৌরবাসী। শহরের মনিহার এলাকার চা দোকানি নিজামুদ্দিন মোল্লা বলেন, এই এলাকা একসময় অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতো। চুরি, ছিনতাই ছিলো নিয়মিত ঘটনা। তাছাড়া আলো না থাকায় সেখানে সেখানে ছিলো মাদকসেবীদের আঁখড়া। তবে এখন সন্ধ্যার পরপর পুরো মণিহার এলাকা আলোকিত থাকে। ফলে চুরি, ছিনতাই এখন এই এলাকায় নেই বললেই চলে।
দড়াটানা এলাকার ব্যবসায়ী আরিফুল হোসেন বলেন, রাতের বেলা আলোটা খুবই জরুরি। এই টাওয়ার লাইট যেমন শহরের সৌন্দার্য্য বাড়িয়েছে, তেমনি আমরা আলোকিত শহর পেয়েছি। সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছে।
এবিষয়ে পৌর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, আলোকিত শহর গড়ার যে অঙ্গীকার পৌরকর্তৃপক্ষ করেছে তা অবশ্যই পজেটিভ। তবে পৌর নাগরিকদের আরও অনেক মৌলিক প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলোর দিকেও পৌরসভার নজর দিতে হবে। শুধু সৌন্দর্য্য বর্ধন করলে চলবে না।
তিনি বলেন, নান্দনিক লাইট আর স্থাপনার নিচে বসে যদি একটা ছবি তুলতে চাই তাহলে কয়েক সেকেন্ডে অন্তত ২০টা মশার কামড় খেতে হবে। সামনে গ্রীষ্মকাল, পানির সংকট তীব্র হবে। শহর সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি এগুলোর দিকেও পৌরসভার নজর দিতে হবে। তাহলে সত্যিকারের নান্দনিক, আলোকিত পৌরসভা হবে যশোর পৌরসভা।
এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান জানিয়েছেন, পৌর এলাকার সড়ক বাতিগুলো এক সময় ঠিকভাবে জ্বলতো না। ফলে রাতে পৌরবাসীর যাতায়াতের কষ্ট হতো। অন্ধকার শহরে অপরাধ প্রবণতা বেশি ছিলো। সেই জায়গা থেকে আমরা চিন্তা করি, রাতে যশোরটা যেনো একটু অন্য রকম হয়। আলোকিত শহর গড়তে পারলে আমরা সবাই নিরাপদ থাকবো। পাশাপাশি রাতের যশোর নান্দনিক যশোরে রূপান্তর হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি স্থানে ৬টি টাওয়ার লাইট স্থাপন করবো। ইতিমধ্যে ৩টি লাইট স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও মুজিব সড়কে নান্দনিক পোলগুলো স্থাপন করা হচ্ছে। সার্কিট হাউসের সামনে থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত ৪০ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৮ টি সড়ক বাতি দেয়া হয়েছে। এবং শহরের সিভিল কোর্ট মোড়ে একটি ও খেজুর চত্বরে একটি নান্দনিক ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হবে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দানে (টাউন হল মাঠ) টাওয়ার লাইট স্থাপন ও মুজিব সড়কের রোড ডিভাইডারে অত্যাধুনিক ডিজাইন ওয়ালা পোল সম্বলিত সড়কবাতি স্থাপন ও প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে শহরের টাউন হল স্লুইচ টিপে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন, পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মুরাদ আলী, দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ-দ্দৌলা, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর ইনস্টিটিউটের সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ লিটু, দৈনিক বাংলার ভোরের সম্পাদক শামছুদ্দিন আবুল কালাম আজাদ জ্যোতি, যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী বিএম কামাল, ইঞ্জিনিয়ার সাইফুজ্জামান তুহিন প্রমুখ।