নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যশোর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। জেলা ও উপজেলা রিটার্নিং কার্যালয়ে অন্তত ২০টি লিখিত অভিযোগ করেছেন আসনটির স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মোহিত কুমার নাথ। টানা দুই বারের সংসদ সদস্য এমপি নাবিলের কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- আচরণবিধি লঙ্ঘন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়া, ভয়ভীতি প্রদর্শন, কেন্দ্র দখল ও প্রকাশ্যে সিল মারার জন্য ভোটারদের হুমকি প্রধানতম। এছাড়া রাতে ভোটারদের বাড়ি বাড়িয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে নৌকা প্রতীকের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে আসনটিতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন মোহিত নাথ।
বিভিন্ন অভিযোগে জানা গেছে, গত ২৬ ডিসেম্বর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের দাড়িপাড়া ও দারোগার মোড় এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহিত কুমার নাথের প্রচার মাইকিং চলছিলো। এমন সময় ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের কর্মী সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান জিসানের নেতেত্ব ঈগলের প্রচার মাইক থামিয়ে টেনে হিঁচড়ে ড্রাইভারকে নামিয়ে হুমকি ও মারমুখি আচরণ করে। এ সময় তারা বলে- এই ইউনিয়নে ঈগলের কোন প্রচারণা চলবে না। জিসানের এই আচরণ আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতির প্রভাব পড়বে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে নজর রাখা হচ্ছে। ছাড় দেয়া হচ্ছে না। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জরিমানাও করা হচ্ছে।
আবরাউল হাছান মজুমদার
জেলা প্রশাসক ও রির্টানিং কর্মকর্তা
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে- জিসান পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। সম্প্রতি প্রকাশ্য অস্ত্র উঠিয়ে ফূর্তিকর তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতি জিসান বাহিনীর কারনে এই ইউনিয়নে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
গত ২৫ ডিসেম্বর সদরের লেবুতলা ইউনিয়নে ১ নম্বর আগ্রাইল গ্রামের ঈগল প্রতীকের কর্মী জামিরুল ইসলামকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গলা কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছে নৌকা প্রতীকের কর্মী সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা। এমনকি তাকে ভোটের পর কিভাবে এলাকাতে বসবাস করবে, সেটাও হুমকি দেন রেজাউল। এছাড়া প্রতিনিয়ত নৌাকার কর্মী-সমর্থকরা ঈগল প্রতীকের কর্মীদের বাড়িতে হুমকি ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর লেবুতলা ইউনিয়নে লেবতুলা বাজারে ঈগল প্রতীকের প্রতীকের কার্যালয়ের সামনে এসে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম রেজার নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এসময় ঈগল প্রতীকের কর্মীদের উপর তারা মারমুখি আচারণ করে। এসময় ভোটের মাঠে এই এলাকাতে কেউ ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে পারবে না বলে হুমকি দেন। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা ঈগল প্রতীকের কর্মী সমার্থকদের হুমকি ও প্রচারণাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত আসনটিতে হুমকি ও হামলার ঘটনায় এলাকাগুলোতে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মোহিত কুমার নাথ বলেছেন, ‘এই আসনেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী টানা দুইবার সংসদ নির্বাচিত হয়ে এলাকায় তেমন উন্নয়ন করেনি। একই সাথে তৃণৃমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই। নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করাতে তার সঙ্গে নেই। যখন আমার বিজয়ের পাল্লা ভারি হতে চলেছে; তখনই নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা আমার কর্মী-সমর্থকদের প্রতিনিয়ত হামলা হুমকি, প্রচারণাতে বাধা দিচ্ছে। এ ছাড়াও সমর্থক ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও রাতের বেলা ভয় ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নেয়া, একজন প্রার্থীকে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করা, নির্বাচন কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই করা হবেসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছি। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে এখন থেকেই পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সম্বনয়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমরা আমাদের সকল কর্মীদের বলে দিয়েছি, এবারের নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠু। ফলে কাউকে কোন হুমকি দেওয়া যাবে না। ফলে আমাদের কোন কর্মী-সমর্থক কাউকে হুমকি, প্রচারণাকে বাধা দিচ্ছে না।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও রির্টানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘আমাদের কাছে বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। যেসব অভিযোগ আসছে তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে। কোন ছাড় দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনে অভিযোগ তদন্ত করতে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি নির্বাচনে আচরণবিধি ঠিকমতো প্রার্থীরা মেনে চলছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জরিমানাও করা হচ্ছে, পরবর্তী কারণ দর্শনার নোটিশও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।