নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুরোদমে জমে উঠেছে যশোর-(সদর) নির্বাচনী মাঠ। প্রার্থীদের প্রচারণায় এই মাঠ এখন দারুণ ব্যস্ত। দিনভর ও রাতের একটা বড় অংশজুড়ে তারা ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়াতে প্রার্থীরাই মাঠে ছিলেন বেশি। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী, স্বতন্ত্র, জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সবার কাছে চাচ্ছেন ভোট; অঙ্গীকার করছেন উন্নয়নের। তবে সেই জায়গায় থেকে ব্যতিক্রম আসনটির তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী কামরুজ্জামান। ছুটির দিনে সব প্রার্থীই যখন প্রচারে ব্যস্ত তৃণমূল বিএনপির এই প্রার্থী দিনভর কাটিয়েছেন বাড়িতেই।
শহর ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কামরুজ্জামান গত ২০১৫ সাল থেকে দুই দফায় যশোর পৌরসভা নির্বাচনে পৌর এলাকার তিন নম্বর ওয়ার্ড (ঘোপ) থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বদ্বিতা করে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। পৌরসভার কাউন্সিলন নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি। কামরুজ্জামানের শ্বশুর জাহাঙ্গীর মজুমদার ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। এই সুবাদে কামরুজ্জামান যশোর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
তৃণমূল বিএনপির দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ। এই প্রতীক নিয়ে কয়েকদিন উপজেলার মধুগ্রাম, চাঁচড়া, শেখহাটি, লেবুতলা গ্রাম ও পৌর এলাকার ঘোপ নোওয়াপাড়া ও সেন্ট্রাল সড়কে নির্বাচনী গণসংযোগে বের হন কামরুজ্জামান। ঘোপ এলাকায় কামরুজ্জামানের বাড়ি। যে কারণে ঘোপ নওয়াপাড়া সড়কে নির্বাচনী একটি কার্যালয় খোলা হয়েছে। কিন্তু ওই কার্যালয়ে কখনো লোকজনের ওঠাবসা করতে দেখেনি স্থানীয় বাসিন্দারা। এমন কি শহরে প্রচার মাইকে তৃণমূল প্রার্থীর কোনো প্রচারও শোনা যায়নি। শহরের কোথাও কোনো পোস্টারও চোখে পড়েনি। শহরে প্রচার মাইক ও পোস্টার পাওয়া যাচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রচার- প্রচারণা খুব বেশি হচ্ছে তা বলবো না। নতুন দল হিসেবে যতটুকু পারছি প্রচার চালাচ্ছি। সৎ ও ভালো মানুষ হিসেবে শহরের মানুষ আমাকে চেনে। কিন্তু নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে ততটা সাড়া মিলছে না। মূলত ভোট দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। নৌকা আর স্বতন্ত্রের পক্ষে। স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলে হয়তো ভোট জমতো। তিনটি প্রচার মাইকের ইজিবাইক রয়েছে। সারাদিন গ্রামের দিকে প্রচারের পর সন্ধ্যায় শহরে ঢোকে। পোস্টারও বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তৃণমূল বিএনপির যশোর জেলায় কোনো কমিটি নেই। দলীয় কার্যালয়ও কেউ চেনে না। এ বিষয়ে কামরুজ্জামান বলেন, জেলায় দলীয় কমিটি না থাকলেও আহ্বায়ক হিসেবে আমি আছি। আমার সাথে ১৫ জনের মত কর্মী সমর্থক রয়েছে। কামরুজ্জামানের সহকারী শেখ ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘আমরা ৫/৬ দিন গণসংযোগে গিয়েছি। নির্বাচন পরিচালনার জন্যে আট সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে’। নাম না প্রকাশে তার এক কর্মী বলেন, তৃণমূল বিএনপির এই প্রার্থী ঢাকাতে থাকেন বেশির ভাগ সময়। গত তিন দিন ধরে ঢাকাতে অবস্থানের পর বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যশোরে ফিরেছেন। প্রসঙ্গত, যশোর-৩ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী কামরুজ্জামান ছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত কাজী নাবিল আহমেদ, স্বতন্ত্র সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মারুফ হাসান কাজল, জাতীর পার্টির মাহবুব আলম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির অ্যাড. সুমন কুমার রায়, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. তৌহিদুজ্জামান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শেখ নুরুজ্জামান। এই আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে লড়াইয়ের আভাস মিলছে।