নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে গণধর্ষণের সত্যতা মিলেছে। ডিএনএ পরীক্ষা, আটক আসামির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং সরেজমিন ও গোপনে তদন্ত শেষে চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দু’টি চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কেএম শফিকুল আলম চৌধুরী।
অভিযুক্ত আসামিরা হলো, সদর উপজেলার জগহাটি গ্রামের পশ্চিমপাড়ার মৃত সিরাজুল বিশ^াসের ছেলে বাচ্চু (৪১), একই গ্রামের পূর্বপাড়ার নজরুল মল্লিকের ছেলে সাকিব হোসেন (২১), আনিসুর রহমানের ছেলে আজিমুল ইসলাম (২৮) ও আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত কমলাপুর গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলামের ছেলে মহব্বত হোসেন (১৬)।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, চুড়ামনকাটিতে স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী বসবাস করেন। আসামি সাকিব হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই নারীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৩ সালের ২৪ মে সকালে মোবাইল ফোনে সাকিব তাকে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। ২৫ মে সাড়ে ৪টার দিকে ফোন করে সাকিব বাড়ি থেকে বের হতে বলে। বিকেল ৫টার দিকে বের হয়ে দেখে সাকিব ইজিবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হাজির হয় আজিমুল ইসলাম। এরপরে সাকিব ও আজিমুল তাকে নিয়ে জগদীশপুর তুলার ফার্মে যায়। আবার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হাজির হয় মহব্বত। তারা ওই নারীকে শামসুর রহমানের শাক ক্ষেতের পাশে নিয়ে গেলে সাকিবের সাথে আজিমুল, বাচ্চু ও মহব্বত ছিল। কিন্তু যাওয়ার সাথেই ওই নারীকে ধাক্কা মেরে আইলের উপর ফেলে দেয়। এরপরে তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অসুস্থ হয়ে ওই নারী অচেতন অবস্থায় শাক ক্ষেতের পাশেই পড়ে থাকে। কিন্তু এরই মধ্যে আসামি বাচ্চু ওই নারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চুরি করে নিয়ে যায়।
কিছুটা সুস্থ হয়ে ওই নারী নানা বাড়ির মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসা করেন। এই ঘটনায় ২৬ মে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন ওই নারী। তদন্ত কর্মকর্তা আসামি মহব্বতকে আটকের পর আদালতে সোপর্দ করেন। মহব্বত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পাশাপাশি অন্য তিন আসামিকে আটকের পর আদালতের নির্দেশে তাদের একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদে এই ঘটনার আরো কিছু তথ্য উপাত্য বের করা হয়।
তবে এর আগে আটকের পরই বাচ্চুর কাছ থেকে ভুক্তভোগী নারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
এরই মধ্যে সকল আসামিকে ডিএনএ টেস্টেও জন্য আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলে মহব্বত ও আজিমুলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তবে অন্য দুই আসামি বাচ্চু ও সাকিবের আলামত পাওয়া না গেলেও ভুক্তভোগী নারীর চুরি হওয়া ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বাচ্চুর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ফলে তদন্ত শেষে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কেএম শফিকুল আলম চৌধুরী ওই চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। তবে আসামি মহব্বত হোসেনের বয়স কম থাকায় আইনের সাথে সংঘাতের কারণে তার বিরুদ্ধে আলাদা দোষীপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
