নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহরতলীর বাহাদুরপুর এলাকার পঞ্চাশ উর্ধ্ব শাহানারা আক্তার। সোমবার বিকালে বাড়ি থেকে যশোর শহরের বড়বাজারে আসেন গৃহস্থলী জিনিসপত্র কিনতে। কেনাকাটা শেষে বাজারেই তিন অজ্ঞাত যুবকের সঙ্গে তার পরিচয়। আলাপচারিতার ফাঁকে কৌশলে নেশাদ্রব্য নাকের কাছে নিয়ে শুকিয়ে তাকে স্মৃতিভ্রম করেন। এরপর অজ্ঞাত তিন যুবকের কথামতো শহরের এক প্রান্তে যেয়ে প্রতারকরা ওই নারীর গলা থেকে স্বর্ণালংকার খোলে নেন। এসব নিয়ে দ্রুতই সটকে পড়ে প্রতারকরা। শাহানারা বুঝতেই পারেননি যে প্রতারকচক্রটি তার গলা থেকে খুলে নিচ্ছেন তার এসব মূল্যবান জিনিসপত্র। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বেলা সাড়ে ৫ টায় দিকে শহরের গাড়িখানা রোডে। এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শাহানারা আক্তার যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী শাহানারা আক্তার শহরতলীর বাহাদুরপুর এলাকার আসাদুজ্জামানের স্ত্রী। তিনি বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, যশোরে অভিনব কৌশলে ছড়িয়ে পড়ছে নানা প্রতারণা ও ছিনতাই। প্রতারণার নিত্যনতুন পন্থা অবলম্বন করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে একটি ভয়ংকর অপরাধী চক্র। অপরাধ সংগঠিত করতে তারা ব্যবহার করছেন ভয়ংকর মাদক স্কোপোলামিন। অপরাধ জগতে যার পরিচিতি ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ নামে। শয়তানের নিঃশ্বাস মাদক একটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ। পাশ্চাত্যের এই ভয়ংকর মাদক এখন যশোরের সংঘবদ্ধ একটি অপরাধী চক্রের হাতে। এ পন্থায় একজন প্রতারক কিংবা ছিনতাইকারী ভুক্তভোগীকে চাইলেই কাবু করে নিজের ইশারায় নাচাতে পারেন। প্রতারক যে নির্দেশনাই দেবেন, তা-ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন সেই নিরীহ ভুক্তভোগী। ইতোমধ্যে যশোরে চক্রের কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে ভুক্তভোগী শাহানারা আক্তার ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ নামে চক্রের হাতে প্রতারিত হয়েছে কিনা সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। তদন্ত করেই বিষয়টি জানা যাবে।
ভুক্তভোগী শাহানারা আক্তার বলেন, ‘দুপুরে বাড়ি থেকে শহরে আসি। বড়বাজারের গৃহস্থলির জিনিসপত্র কিনে বাড়ি ফিরছিলাম। বাজারের জব্বর এন্ড সন্সের সামনে তিন যুবক আমার সঙ্গে কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে কৌশলে নেশাদ্রব্য নাকের কাছে নিয়ে শুকিয়ে তাকে স্মৃতিভ্রম করে। এর পর তাদের কথামতো আমি বাজারে ঘুরতে থাকি। বাজারের মধ্যে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দেন। প্যাকেটে কি আছে জানি না। পরে খুলে দেখি প্যাকেটের মধ্যে দুটি রুটি। তারা আমাকে স্মৃতিভ্রম করে প্রায় আধাঘণ্টার বেশি সময় ঘুরিয়েছে এবং তাদের কথামতো চলেছি। এর পর গাড়িখানাস্থ একটি ব্যাংকের সামনে থেকে আমার গলা থেকে এক ভরি স্বর্ণের হার খুলে নিয়ে গেছে। তারা যখন চেন খুলছিলেন তখন আমি স্মৃতিভ্রমে থাকায় কিছুই বুঝতে পারেনি। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘স্বর্ণলংকার হারিয়ে এই মহিলাটি কান্নাকাটি করছিলেন। তার পর তাকে উদ্ধার করে থানায় দিয়ে আসি। কারা কখন কিভাবে তার জিনিসপত্র নিয়ে গেছে বলতে পারি না। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগী নারীর বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত পরেই বলা যাবে নারী কিসে প্রতারিত হয়েছেন। এর বাইরে বেশি বলা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ৫ মে যশোরের অভয়নগরে ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ এক প্রতারক চক্রের হাতে প্রতারিত হয়েছিলেন এক মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী। স্মৃতিভ্রম হয়ে শরিফুল ইসলাম নামে ওই ব্যবসায়ী প্রতারকদের হাতে তুলে দেন ৬ লাখ টাকা। এরপর ঢাকার ভাটারা থানা ও যশোর শহরের সিটি প্লাজা থেকে পৃথকদুটি অভিযান চালিয়ে এই চক্রের দুই ইরানি নাগরিকসহ পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ চক্রের কয়েক সদস্য আটক করা হয়েছে। এই বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।