নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি মাসের প্রথম দিনটি শুরু হয়েছিল বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বাড়তি দাম কার্যকরের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় দিনে এসে জানা গেল, বেড়েছে রান্নার গ্যাস। আর গতকাল শুক্রবার মুরগি, ডিম, ডাল ও কাঁচা মরিচের দাম ছিল ক্রেতাদের নাগালে বাইরে। যা সংসারে ব্যয়ের চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে গিয়ে হাফিয়ে উঠছেন মধ্য ও নিম্নবিত্তরা।
মাত্র তিন দিনের ব্যবধান। এর মধ্যেই কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। আদার ঝাঁজও ক্রেতার চোখে নামাচ্ছে জল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা আদা কেজিতে বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। কয়েক দফায় দাম বাড়ানোর পরও হাহাকার কাটেনি চিনির বাজারে। আর ভরা মৌসুমেও ভোক্তার পকেট ফাঁকা করছে কয়েকটি সবজি। বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে ক্রেতারা পড়ছেন দামের চাপে। গতকাল শহরের বড় বাজারে খোঁজ নিয়ে নিত্যপণ্যের দামের এমন চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। যা তিন দিন আগেও কেনা গেছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। ব্রয়লারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে সোনালি জাতের মুরগির ওপর। এ জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ ধরনের মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। ডিমের দামও ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। তবে এক মাস আগে ডিমের দাম ছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা।
বড়বজারের মুরগি বিক্রেতা আবদুল হালিম বলেন, প্রাণী খাদ্যের দাম বেশি। উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্রয়লারের বাচ্চার দামে। পাইকারি পর্যায়ে ব্রয়লারের সংকট চলছে। এসব কারণে তিন-চার দিন ধরে ব্রয়লারের দাম বাড়ছে।
আরও পড়ুন: যশোরে গত ৯ বছরে ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে : এমপি নাবিল
শহরের বেজপাড়া তালতলা বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসে দাম শুনে ক্রেতা সাদেক আলীর চোখ ছানাবড়া। তিনি বলেন, গত সপ্তাহেও ১৪৫ টাকা কেজিতে ব্রয়লার কিনেছি। তিন-চার দিনে কী এমন হলো যে দাম এত বেড়ে গেল! এভাবে চললে তো ব্রয়লার খাওয়াও ছাড়তে হবে। গতকাল কিনেছি ১৬০ টাকা কেজিতে। সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। গত সপ্তাহে যা ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা ছিল।
গত পাঁচ মাসে চিনির দর বাড়ানো হয় চারবার। খোলা চিনির দর ১০৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে।
মাঝে কয়েক দিন সামান্য কমে ফের বেড়েছে আদা, পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, এলাচসহ বেশিরভাগ মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমদানি করা পণ্য। বাজারে দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়, আর আমদানি করা আদা কিনতে হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে দেশি আদা ১৫০ থেকে ১৮০ এবং আমদানি করা চায়না আদা ২৩০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রসুন কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০ টাকার মতো। আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। গত সপ্তাহে দেশি রসুনের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় কেনা গেলেও এখন লাগছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
মাঝে ক’দিন কমে আবারও ছোলার দাম বেড়েছে। ৮ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। তবে রমজানের আগেই ছোলার দাম ১০০ টাকা পার হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বড়বজারের মুদি দোকানী আশিষ বিশ্বাস।
জিরার কেজিতে আরও ৫০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে জিরার কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় কেনা গেছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। দারচিনি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে এলাচের দাম। ছোট এলাচের কেজি ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়।
ভরা মৌসুমেও কয়েকটি সবজির দাম কমার লক্ষণ নেই। পটোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। বরবটি, বেগুন, করলা, ঝিঙা ও চিচিঙ্গার কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি চলছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এখনও শিমের কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা কমে মুলা ৩০, গাজর ৪০ থেকে ৫০, শসা ৫০ থেকে ৬০, শালগম ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া প্রতিটি বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর মাঝারি আকারের লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।
আরও পড়ুন: ৩২ জেলায় নিপাহ ভাইরাস
আগের বাড়তি দরেই স্থিতিশীল দেখা গেছে চাল, আটা ও ভোজ্যতেলের দাম। মাছের বাজারও রয়েছে একইভাবে স্থির।
ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে ১০ টাকা। ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম গত সপ্তাহেও প্রতি ডজন ১২৫ টাকায় কেনা যেত, তা এখন কিনতে হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে।
ডিম সাধারণ মানুষের জন্য পুষ্টির বড় উৎস। কোনো কোনো পরিবারে ভাতের সঙ্গে দুতিনটি ডিম দিয়ে এক বেলার খাবার হয়। বাজারে ডিমের ডজন সাধারণত ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে থাকে। কয়েক মাস ধরে দাম অত্যন্ত চড়া।
মাছের বাজারেও স্বস্তি নেই। যেসব চাষের মাছের দাম বছরজুড়ে স্থিতিশীল থাকে, সেগুলোর দরও বেড়েছে। যেমন তেলাপিয়া মাছ সাধারণত ১৫০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। এখন তা ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। রুই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা ছিল, সেটা এখন ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রান্না করতে কাঁচা মরিচ লাগেই। কাঁচা মরিচের কেজি উঠেছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় ১০০ টাকা কেজির নিচে। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম স্থিতিশীল আছে। তবে মৌসুমের সময় দাম যতটা কমে, এবার ততটা কমেনি।
২০২০ সালের শুরুতে খোলা আটার কেজি ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা; তা এখন কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে মানুষকে। প্যাকেটজাত আটার দাম আরও বেশি। কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা।
২০২১ ও ২০২২ সালজুড়ে ভোজ্যতেলের দাম চড়া ছিল। এখনো চড়া। ২০২০ সালের শুরুতে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১০০ টাকার আশপাশে। এখন তা ১৮০ টাকার বেশি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, ‘চিনির বাড়তি দাম ঠেকাতে আমরা সক্রিয় আছি। এলপিজির দাম সরকার নির্ধারিতের চেয়ে বেশি নেয়া হচ্ছে বলে আমরা জেনেছি। শিগগিরই অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:বেনাপোল বন্দর দিয়ে টিসিবির ডাল আমদানি