-
আজ যশোর সদর উপজেলা নির্বাচন
-
গোটা জেলার চোখ যশোর সদরে
-
দুই প্যানেলের প্রেস্টিজ ইস্যু
-
কে হাসবেন বিজয়ের হাসি ?
শাহারুল ইসলাম ফারদিন
বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে স্থগিত হওয়া যশোরে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজ (বুধবার)। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সদর উপজেলার ২১৯টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনে সদর উপজেলায় ৮ জন চেয়ারম্যান, ৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ মোট ১৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে এমপি সমর্থিত আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পক্ষ তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, ঘোড়া প্রতীকের ফাতেমা আনোয়ারের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা আভাস মিলছে। যদিও সকলেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে ভোটাররা বলছেন, চেয়ারম্যান পদে তিনজন এবং পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদেও তিনজনের জামানত বাজেয়াপ্তের আশংকা রয়েছে।
এদিকে, শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণে নিরাপত্তায় নিযুক্ত করা হয়েছে পুলিশ, আনসার, র্যাব-বিজিবির ৬ হাজার ফোর্স। জেলার ৭ উপজেলার ভোট গ্রহণ আগেই শেষ হওয়ায় আইনশৃংখলা বাহিনীর পুরো ফোর্স সদর উপজেলার ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসন বলছে, সদর উপজেলার ভোটটাও অন্য উপজেলার মতো ঝামেলা ছাড়াই শেষ করতে চায়।
অপরদিকে গতকাল বিকালেই প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন। নির্বাচনী সামগ্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা নিজ কেন্দ্রে পৌঁছে যান।
সদরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলার অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কোনো ভোটিং মেশিনে সমস্যা দেখা দিলে তা তাৎক্ষণিক পরিবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, নির্বাচনে ২ হাজার ১শ জন পুলিশ, আনসার সদস্য ৩ হাজার ৫শ জন ও বিজিবি, র্যাব, ডিবি পুলিশ সদস্যসহ মোট ৬ হাজার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন । এ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রতিটি বুথে ৫জন পুলিশ সদস্য ও ১৬ থেকে ১৭জন আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানানো হয়েছে। গতকাল সকালে যশোর পুলিশ লাইনসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। তিনি জানান, সদর উপজেলা নির্বচনে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবারও কেন্দ্রগুলোকে সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনে কেন্দ্রের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে পুলিশ সদস্যদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধ পরিকর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে না।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যেসব কেন্দ্র ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলা হচ্ছে, আগে সেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হতো। বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করে এ তালিকা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে যে কেন্দ্রে ভোটার বেশি, কোনো প্রার্থীর বাড়ির কাছে ভোট কেন্দ্র কিনা, প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি। নির্বাচন সামনে রেখে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের নিয়মিত অভিযান জোরদার করা হয়। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়। এজন্য নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে। পরিবেশ ভালো রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার বলেন, ভোটের পরিবেশ নষ্ট করা এ ধরনের চিন্তা যদি কেউ করেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ যদি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ছক করেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নির্বাচন অফিস সূত্র মতে, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৬ প্রার্থী প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৮, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন প্রার্থী প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে কে হাসবেন বিজয়ের হাসি তা নিয়ে ভোট সচেতনরা বেশ কয়েকদিন ধরেই নানান হিসেব নিকেশ করছেন। ফেসবুকেও স্ট্যাটস দিতে দেখা গেছে অনেককে। ইমতিয়াজ আহমেদ মুন নামে যশোর সদরের এক ভোটার ফেসবুকে লিখেছেন সদরে ফন্টু চাকলাদার (মোটরসাইকেল), ফাতেমা আনোয়ার (ঘোড়া) ও আনোয়ার হোসেন বিপুলের (দোয়াত কলম) মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অন্য ৫ প্রার্থীর দুই-একজন সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেয়ার লোক খুঁজে পাবেন না।
সদর উপজেলা নির্বাচনে মোট ২১৯টি ভোট কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৫৬ কক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নের ২১৯টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। মোট ভোটার ৬ লাখ ৭ হাজার ৭৪২ ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩০, মহিলা ৩ লাখ ৩ হাজার ৫২ ও হিজড়া ভোটার ৭ জন। দায়িত্ব পালন করবেন ২১৯ প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ৭৫৬ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৩ হাজার ৫১২ পোলিং অফিসার।