# প্রার্থীদের সাথে বহর কম
# ছোট ছোট পরিসরে প্রচার
# নারীদের বোঝাচ্ছেন নারীকর্মীরা
# শিক্ষিত-তরুণদের টার্গেট
# ভালোবেসে ভোটারের মন জয়ের চেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়ি পাল্লার প্রার্থীদের জয়ী করতে যশোরে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে থাকলেও এক্ষেত্রে জামায়াতের কৌশল ভিন্ন। তাদের প্রার্থীর সাথে বিএনপির প্রার্থীর মতো বহর কম। হাক-ডাক, হৈ-চৈ না করে তারা ভোটার ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে যাচ্ছেন অনেকটা নিরবেই। তাদের কর্মীরাও জটলা তৈরি না করে ছোট ছোট গ্রুপ করে পরিস্থিতি বুঝে ভোটের আলাপ করছেন জনগণের সাথে।
সূত্র মতে, নির্বাচনে জামায়াতের ভিশন-মিশন ও ভোট পরবর্তী সহাবস্থানের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের প্রার্থী ও কর্মীরা। তেমনিভাবে জামায়াতের কর্মীরা দুই-তিনজন করে হাটবাজার, চায়ের দোকান কিংবা নামাজের পর নির্দিষ্ট কয়েকজনকে টার্গেট করে ভোটের জন্য অনুনয়-বিনয় করছেন। সুন্দর ব্যবহারে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। গত কয়েকদিন যশোরের কয়েকটি এলাকায় জামায়াত কর্মীদের প্রচারণা এবং তাদের কর্মীদের ভোটের কৌশল পর্যবেক্ষণ করে এমন তথ্য পেয়েছে।
আমরা ভোটারদের ভালবেসে ভোট চাইছি। গত ৫ আগস্টের পর জামায়াতের কেউ চাঁদাবাজি করেনি। কারো নির্যাতনও করিনি। এজন্য আমরা আশাবাদী।
-অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন, প্রচার সম্পাদক, জামায়াত ইসলামী, যশোর
গত এক সপ্তাহ আগে বিকালে আসরের নামাজ শেষে যশোর শহরের সাবেক পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করছিলেন জামায়াতের দুই কর্মী। তারা অত্যন্ত বিনয়ে সাথে সবজি বিক্রেতাদের কাছে জামায়াত ইসলামীর কথা বলছিলেন। সবজি বিক্রেতার যাতে বেচাকেনায় ব্যাঘাত না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক ছিলেন তারা। দোকানে যখন কাস্টমার থাকছিলো না তখন ভোট নিয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছিল ওই কর্মীদের। ওই সবজি বিক্রেতার সাথে কথা শেষে আরেকটু দূরে অন্যজনের সাথেও কথা বলতে দেখা যায়। এভাবে ‘অনেকটা নিরবে-চুপি চুপি’ ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছে জামায়াত ইসলামী।
এদিকে ফজরের নামাজ শেষে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে জামায়াতের পুরুষ ও নারী কর্মীরা মহল্লা মহল্লা ভোট প্রার্থনা করছেন। পুরুষ কর্মীরা মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে আড্ডার ছলে চা খেতে আসা মহল্লাবাসীর কাছে ভোট চাইছেন। আর নারী কর্মীরা পাড়া মহল্লার অলিতেগলিতে প্রবেশ করে বাসা বাড়ির নারীদের কাছে ভোট চাইছেন।
সূত্র মতে, বিএনপির ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের প্রত্যাশাতীত সাফল্য ত্রয়োদশ নির্বাচনেও কাজে লাগাতে চায় দলটি। দলটির নেতাকর্মীরা জুলাই সনদের ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছেন। এর মাধ্যমে জনমত তৈরি এবং ভোটের মাঠে নিজেদের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করেই তারা চেষ্টা চালাচ্ছে জোট বেঁধে ভোট করার।
এজন্য কয়েকটি ইসলামি দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতারও চেষ্টাও চলছে। কোনো অবস্থাতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা। এজন্য রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি সমানতালে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে নিতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কৌশলে পা ফেলছে জামায়াত। রাজপথে আন্দোলন তাদের নির্বাচনি কৌশলের অংশ। সরকার ও ‘বিশেষ’ একটি দলের ওপর চাপ রেখে ভোটের মাঠ সাজাচ্ছে জামায়াতের দায়িত্বশীলরা। ডাকসু-জাকসুর নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দলটি কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনে ভালো করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না। সেই লক্ষ্যে যশোরের ৬টি আসনেই দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে দাঁড়ি পাল্লার প্রার্থী মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ, যশোর-৩ (সদর) ভিপি আবদুল কাদের, যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও বসুন্দিয়া) আসনের অধ্যাপক গোলাম রসুল, যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে অধ্যাপক মোক্তার আলী। জেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ভাষ্য, কয়েক মাস আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা করা হয়েছে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন সামাজিক কর্মসূচিসহ নানা অনুষ্ঠানে। গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা এবং উন্নয়ন ইস্যু নিয়ে জনগণের কাছে নিজেদের (প্রার্থী) তুলে ধরছেন। জনগণের আস্থা অর্জনে কাজ করছেন। শিক্ষিত-তরুণ ভোটারদের কাছে টানার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। প্রার্থীদের বাইরে কাজ করছেন জামায়াতের নারী কর্মীরা। তারা নারী ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। করছেন উঠান বৈঠক। এ সব কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে তারা বাধা পাচ্ছেন। একটি বড় দলের ইঙ্গিত করে জামায়াত কর্মীরা বলছেন, তাদের প্রচারণায় বড় ধরনের বাধা দেয়নি ঠিকই। তবে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি আসছে। আর আওয়ামী লীগ ঘরোনার কেউ আমাদের সাথে কথা বললে তাদের ওপর নেমে আসছে নির্যাতনের খড়গ। তবে আমরাও লড়াই করে বাঁচতে চাই। ভয়ে পিছু হাঁটার সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে যশোর জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বলেন, আমরা নির্বাচনে জয়ী হতে চাই। এজন্য আমাদের কৌশল একটু ভিন্ন। ছোট ছোট পরিসরে জনমানুষের সাথে মিশে আমরা ভোট করছি। আমরা ভোটারদের ভালবেসে ভোট চাইছি। গত ৫ আগস্টের পর জামায়াতের কেউ চাঁদাবাজি করেনি। কারো নির্যাতনও করিনি। এজন্য আমরা আশাবাদী।
আলাপকালে তিনি আরো বলেন, ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। আগে একদল ভয় দেখাতো। এখন অন্যদল। তফসিল ঘোষণা করা হলে প্রশাসন শক্ত হবে। তখন এমন পরিস্থিতি থাকবে না-এমন আশাবাদী এ জামায়াত নেতা।
