নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে নৃত্যশিল্পী খাদিজা খাতুন মিতু কর্মকারকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার একমাত্র আসামি মৃন্ময় ভদ্র নিলয়।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকাকালীন মোবাইলে ধারণ করা অন্তরঙ্গ ছবি টিকটকের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে বারবারে টাকা দাবি করার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়। বৃহস্পতিবার জবানবন্দিতে এমনই কথা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার সরোয়ার হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
এরআগে নিহতের মা সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা উপজেলার ধানদিয়া গ্রামের আজগর আলীর স্ত্রী নাসিমা বেগম ২৪ এপ্রিল কোতোয়ালি থানায় নিলয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল যশোর সদর উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামস্থ বুকভরা বাঁওড়ের পাড় থেকে খাদিজা খাতুন মিতু কর্মকারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত খাদিজা খাতুন মিতু কর্মকার সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা উপজেলার ধানদিয়া গ্রামের চৌরাস্তার আজগর আলীর মেয়ে।
আসামি মৃন্ময় ভদ্র নিলয় জানিয়েছেন, খাদিজা খাতুন মিতু তার সাবেক স্ত্রী। মিতু প্রথমে একজন নৃত্যশিল্পী ছিলেন। কয়েক বছর আগে নিলয়ের সাথে তার পরিচয় এবং বিয়ে হয়। বিয়ের আগে মিতু সনাতন ধর্মের অনুসারী ছিলেন। কিছুদিন সংসার করার পরে প্রায় তিন বছর আগে নিলয়ের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ওই নিলয়ের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছিল মিতু। কিছুদিন পর আবারও সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করেন মিতু। কিন্তু তিন বছর আগে নিলয়কে ছেড়ে দিলেও ওই সময়ের স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কিছু ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করেছিলেন মিতু। আর সেই ছবিগুলো টিকটকের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নিলয়ের কাছ থেকে বারবারে টাকা হাতিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। সে কারণে মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নিলয়। গত ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যার পরে নিলয় সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থেকে মিতুকে নিয়ে রওনা করেন যশোরে। রাত ১১টার দিকে তাকে নিয়ে বুকভরা বাঁওড়ের পাশে গিয়ে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ এবং মিতুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি সেখানে ফেলে চলে যায় নিলয়।
এই ঘটনায় নিহত খাদিজার মা নাসিমা বেগমের দায়ের করা মামলায় জানিয়েছেন, ৯ বছর আগে তার মেয়ে খাদিজাকে সাতক্ষীরা সদরে রফিকুল ইসলাম বাবু ওরফে চোর বাবু নামে এক যুবকের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। দাম্পত্য জীবনে মরিয়ম সুলতানা নামে তাদের একটি মেয়ের জন্ম হয়। বর্তমানে তার বয়স ৮ বছর। তবে মেয়েটির জন্মের পরে খাদিজার স্বামী তাকে ফেলে অন্যত্র চলে যায়। এরপরে জীবিকার তাগিদে সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ গান করে। আর নাচ গান করাকালে মৃন্ময় ভদ্র নিলয়ের সাথে তার পরিচয়। নিলয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাদিজাকে সাথে নিয়ে যেতো। পাশাপাশি তাদের বাড়িতেও মাঝেমধ্যে যাতায়াত করতো নিলয়। আর নাচ গানের শিল্পি হওয়ায় অনেকে খাদিজাকে চিনতো। পাশাপাশি নিলয়ে সাথে খাদিজার তোলা কিছু ছবি ও ভিডিও দেখে অনেকে বলেছে তোমার মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে নিলয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে। তবে খাদিজার কাছে জিজ্ঞাসা করলে সে অস্বীকার করতো। ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটা অনুষ্ঠানে কাজ আছে বলে খাদিজাকে সাথে নিয়ে রওনা করে নিলয়। রাত ৮টায় ফোন করলে খাদিজা বলছে তার বাড়িতে যেতে দেরি হবে। রাতে ফোন করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। গত ২৪ এপ্রিল সকালে স্থানীয় মেম্বর আনিছুর গাজী জানায় খাদিজার মৃত লাশ উদ্ধার করছে যশোরের পুলিশ। হাসপাতালে এসে মেয়ের লাশের সনাক্ত করা হয়।