সুনীল ঘোষ: পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে যশোর শহরে ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন যশোরবাসী। ঐতিহাসিক এই মুহূর্ত উদযাপনে বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিল যশোর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের। শহরের টাউনহল ময়দানে বড় পর্দায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখার পাশাপাশি সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে শহরের বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন এ জেলার মানুষ। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক র্যালি করেন। শহরের ঐতিহাসিক টাউনহল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
শনিবার সকাল ৯টার আগে থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড আনন্দ র্যালি এসে সমবেত হয় টাউন হল ময়দানে। সবার মুখে ছিল জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে স্লোগান দেয়া হয়। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে শহরের রাজপথ। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীর চোখে মুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক।
বড়পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে টাউনহল ময়দানে আনন্দ র্যালিসহ অংশ নেন বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্কাউটসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টা ৫৯ মিনিটে সেতুর ফলক উম্মোচন করার পরপরই যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এ সময় পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও পৌর মেয়র হায়দার গনী খান পলাশ, জেলা পরিষদের প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল, মুক্তিযুদ্ধকালী বৃহত্তর যশোর জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধান আলী হোসেন মনি, ডেপুটি প্রধান অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুযাহারুল ইসলাম মন্টু, যশোর এমএম কলেজের অধ্যক্ষ মর্জিনা আক্তার, বীরমুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম মন্টু, দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম মন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলা, জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযম, প্রেসক্লাব যশোর’র সভাপতি জাহিদ হোসেন টুকুন, সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা হারুল-অর-রশিদ ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সন্ধ্যায় টাউনহল ময়দানে রওশন আলী মঞ্চে পদ্মা সেতুর থিম সং পরিবেশিত হয়। পরে যশোর ও ঢাকার অর্ধশতাধিক শিল্পী পদ্মা সেতু নিয়ে মনোমুগ্ধ গান পরিবেশন করেন। ৯টায় যশোরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ভবনে আলোকসজ্জার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। রাত সাড়ে ৯টায় আতশবাজি ফোটানোর মধ্যদিয়ে জেলা প্রশাসনের দিনের কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।
এদিকে দুপুরে যশোর শহরের গাড়িখানাস্থ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌরাস্তায় যেয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেয় জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলী রায়হান, মেহেদী হাসান মিন্টু, হুমায়ন কবির কবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু সেলিম রানা, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক কাজী আবদুস সবুর হেলাল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ফারুক আহমেদ কচি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুখেন মজুমদার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুন্সী মহি উদ্দিন, উপ প্রচার সম্পাদক লুৎফুল কবির বিজুসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, বিকালে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে জেলা পুলিশের উদ্যোগে আনন্দ শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। বিশাল র্যালিটি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে গান-বাজনার তালে তালে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও পদ্মাসেতু উদ্বোধনী আয়োজনে মেতে উঠতে বিকেলে শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ভৈরব চত্বরে আনন্দ শোভাযাত্রা এবং সন্ধ্যায় সঙ্গীতানুষ্ঠান করে যশোর সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।