নিজস্ব প্রতিবেদক
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক জালাল উদ্দিন, এলাকায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। গ্রামের মানুষের চিকিৎসা সেবাদানের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে। দলটির মহাসমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার রাতে রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে হামদার্ন পরিবহনের একটি রিজার্ভ বাসে চড়ে রওনা হন ঢাকার উদ্দেশ্যে।
কিন্তু গভীররাতে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হলে নিহত হন তিনিসহ চারজন। গুরুতর আহত হন অন্তত ১৫ জন। নিহত চারজনের বাড়িই যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নে। মর্মান্তিক এই মৃত্যুর খবরে গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম।
শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে জালাল উদ্দিনের নওয়পাড়া ইউনিয়নের পাগলাদাহ পূর্বপাড়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠেছে। তখনও নিহতের মরদেহ পৌঁছায়নি বাড়িতে। তবে তার জন্যে কবর খোঁড়া, গোসলের পানি গরম সবই প্রস্তুত করা হচ্ছে। গ্রামের মানুষও ভিড় করেছেন ওই বাড়িতে।
নিহত জালালের বাড়িতে বসে আহাজারি করছিলেন বাসটিতে থাকা আইতুল্লাহ নামে স্থানীয় একজন। তিনি জানান, বাসে থাকা বেশিরভাগ নেতা বয়স্ক। বাসটি সিংপাড়া-নওয়াপাড়া ও হাসাড়া ব্রিজ-২-এর মধ্যবর্তী স্থানে চলন্ত এক ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের মাঝখানের সড়ক দ্বীপে রেলিংয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান দুইজন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজন মারা যান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, এই দুর্ঘটনার দৃশ্য দেখা যায় না। কারোও মাথার মগজ বের হয়ে গেছে। কারোও পা নেই, রক্তাক্ত। আমার আর বলার ভাষা নেই।
নিহত জালালের বড়ভাই মাকসুদুর রহমান জানান, এলাকায় আলেম ও চিকিৎসক হিসাবে সম্মানিত মানুষ জালাল। ভোররাতে সমাবেশে যাওয়ার পথে সে ও তার কর্মীরা দুর্ঘটনায় নিহতের খবরে আমরা ভেঙ্গে পড়েছি।
দুর্ঘটনায় নিহত অপর তিনজন হলেন যশোর সদরের মধুগ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে জিল্লুর রহমান (৬৫), শেখহাটির আব্দুল হালিম মোস্তফা (৫৫) ও বাসচালকের সহকারী (হেলপার) পাগলাদাহ গ্রামের মো. বাপ্পির ছেলে হাসিব (৩২)।
নিহত হেলপার হাসিব পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। একটি দুর্ঘটনায় ছোটবেলাতে পিতা বাপ্পিকে হারান তিনি। গার্মেন্টসে কাজ করে হাসিবকে বড় করেন মা শায়লা বেগম। এখন তিনিও বয়সের ভারে নানা রোগে অসুস্থ। অসুস্থ মা, স্ত্রী ও আড়াই বছরের শিশুকন্যার পরিবারের হাল ধরতে কিছুদিন আগে হেলপারের চাকরি নেয়েছিলেন হাসিব।