নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহরের বকচরে জসিম উদ্দিন হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। আমেরিকা প্রবাসী এক তরুণীর সাথে ঈদের পর বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার ‘ক্ষুব্ধ’ হয়ে তার ‘প্রেমিকা’ আনোয়ারা ওরফে আনু ৪০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে হত্যা করিয়েছেন জসিমকে। পুলিশ এই ঘটনার সাথে জড়িত দুই সন্ত্রাসীকে আটক এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ২টি চাকু ও ১টি হিরো হাঙ্ক মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে। ঈদের আগেরদিন রাতে শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া ও বেজপাড়া তালতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন, বারান্দী মোল্লাপাড়ার লাল মিয়ার ছেলে নাসির উদ্দিন (৩০) ও বেজপাড়া আনসার ক্যাম্প এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে জাহিদ ওরফে ডুবার (২৩)।
তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানা পুলিশের এসআই শরীফ আল-মামুন জানান, মণিরামপুর উপজেলার হাকোবা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে ও মণিরামপুর বাজারের ভাই ভাই গোল্ডেন ফিসের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন গত ২৬ জুন রাতে যশোর শহরের বকচরে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুল কুদ্দুস কোতোয়ালি থানায় মামলা করলে জড়িত সন্ত্রাসীদের শনাক্ত ও আটকের জন্য পুলিশ অভিযান শুরু করে। এক পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ও সোর্সের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এরপর গত ২৯ জুন দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে বারান্দী মোল্লাপাড়া কবরস্থান এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যার সাথে জড়িত নাসির হোসেন নামে এক সন্ত্রাসীকে আটক করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত আড়াইটার দিকে বেজপাড়া তালতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যার সাথে জড়িত জাহিদ ওরফে ডুবার নামে আরেক সন্ত্রাসীকে তারা আটক করেন।
এ সময় ডুবারের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ২টি চাকু এবং একটি হিরো হাঙ্ক মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। আটকের পর নাসির ও ডুবারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বারান্দী মোল্লাপাড়ার আনোয়ারা ওরফে আনু নামে বিবাহিত এক নারীর সাথে পরকীয়া সম্পর্ক ছিলো নিহত জসিম উদ্দিনের। এই নারীই জসিম উদ্দিনকে হত্যার জন্য তার বোনের ছেলে ইব্রাহিমের সাথে ৪০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। পরে ইব্রাহিম তার পরিচিত একই এলাকার সন্ত্রাসী নাসিরের সাথে যোগাযোগ করেন জসিম উদ্দিনকে হত্যার জন্য। এরপর নাসির বেজপাড়া তালতলা এলাকার সন্ত্রাসী ডুবারসহ আরও দুই ভাড়া করেন জসিমকে হত্যা করতে। গত ২৬ জুন রাতে জসিম বারান্দী মোল্লাপাড়ায় প্রেমিকা আনোয়ারা ওরফে আনুর সাথে দেখা করে ফেরার পথে তাকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের চিনিয়ে দেন ইব্রাহিম। ঢাকা রোড তালতলা এলাকার ব্যাটারিপট্টি থেকে চিনিয়ে দেওয়ার পর ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা হিরো হাঙ্ক মোটরসাইকেল নিয়ে জসিম উদ্দিনের মোটরসাইকেল অনুসরণ করতে থাকেন। জসিম উদ্দিন ও তার সঙ্গী রিপন মোটরসাইকেল নিয়ে বকচরে পৌঁছানোর পর তাদের ব্যারিকেড দেন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা। এ সময় কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা জসিম উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়া তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জসিম উদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জসিম উদ্দিন হত্যার পর থেকে আনোয়ারা ওরফে আনু এবং তার বোনের ছেলে ইব্রাহিম পলাতক রয়েছেন। এই দুই জনকে আটক করা গেলে জসিম উদ্দিন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
এদিকে আটক নাসির ও ডুবারকে গত ৩০ জুন আদালতে সোপর্দ এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।