নিজস্ব প্রতিবেদক, মণিরামপুর
যশোরের মণিরামপুরে অটো রাইস মিলের শ্রমিক মিশকাত হোসেন খুনের রহস্য বের করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরকীয়া প্রেমিকাকে মেশকাতের স্ত্রী অপমান করার জেরে প্রবাসী প্রেমিকার পরিকল্পনায় দুই লাখ টাকার বিনিময়ে মেশকাতকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ এক নারী হত্যাকারী ও পরকীয়া প্রেমিকার বাবাকে গ্রেফতার করেছে।
শনিবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ডিবি। গ্রেফতার দুইজন হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামের চুন্নু গাজীর মেয়ে রিক্তা পারভীন (৩০) ও পরকীয় প্রেমিকার বাবা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামের নিজাম সরদার (৬০)।
গ্রেফতার দুইজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ডিবি জানিয়েছে, হত্যার শিকার মেসকাত হোসেন পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে। কয়েক বছর ধরে তিনি যশোরের পদ্মবিলায় ইলা অটো রাইচ মিলে শ্রমিকের কাজ করে আসছিলেন। এসময় মিলের শ্রমিক সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামের নিজাম সরদারের মেয়ে নাজমা খাতুনের সাথে পরকীয়ায় জড়ান মিসকাত। এক পর্যায়ে স্বামী পরিত্যক্তা নাজমা মিলের কাজ ছেড়ে সৌদি আরব চলে যান। এরপরও মিসকাতের সাথে যোগাযোগ ছিল নাজমার। ঘটনা টের পেয়ে মেসকাতের স্ত্রী জুলেখা স্বামীর পরকীয়া প্রেমিকা নাজমাকে মোবাইলে গালমন্দ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিদেশে থেকে মেসকাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন নাজমা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম বলেন, বিদেশে থেকে নাজমা প্রেমিক মিসকাতকে হত্যার জন্য গ্রেফতারকৃত আসামি রিক্তা পারভীনের সাথে ২ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। সেই অনুযায়ী বুধবার রাতে রিক্তা তার পরকীয়া প্রেমিক যশোরের শংকরপুরের শাহীন ড্রাইভারের মাধ্যমে কৌশলে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটায় মিসকাতকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর তারা চেতনা নাশক খাইয়ে অচেতন করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিশকাতকে হত্যা করে লাশ মণিরামপুরের জোঁকা গ্রামের একটি ধানক্ষেত ফেলে যায়।
এসআই মফিজুল বলেন, এই ঘটনায় নিহতের ভাই এরশাদ আলম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মণিরামপুর থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর সাতক্ষীরা অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ভাড়াটে মহিলা খুনি রিক্তা ও হত্যার পরিকল্পনাকারী নাজমা খাতুনের বাবা নিজাম সরদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় আসামিদের হেফাজতে থাকা নিহতের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে গ্রেফতার দুইজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ভোরে শ্রমিক নিয়ে নিজ জমিতে পাকা ধান কাটতে যান মণিরামপুরের জোঁকা গ্রামের চাষি আইয়ুব আলী। খেতে যেয়ে তারা এক যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্থানীয়রা ঝাঁপা ক্যাম্পের পুলিশকে খবর দিলে তারা লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
নিহত মিসকাতের ছোটভাই মামলার বাদী এরশাদ আলম বলেন, আমার ভাই চার থেকে পাঁচ বছর ধরে যশোরে একটি অটো রাইস মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ৮ দিন আগে ভাই বাড়ি থেকে কর্মস্থলে গেছেন। বুধবার রাত ৮টার দিকে ভাই তার স্ত্রীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। ফোনে ভাই জানিয়েছিলেন তারা ৬ জনে মিলে একসাথে অন্য এলাকায় ধান আনতে যাচ্ছেন। রাত ১০টায় বাসায় ফিরে তিনি স্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলেন। এরপর থেকে ভাইয়ের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে।