নিজস্ব প্রতিবেদক: ভৈরব নদ খনন শেষ হয়েছে। এখন চলছে যশোর শহরের দড়াটানা অংশের সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ। কিন্তু নদ দূষণ বন্ধ হয়নি। জেলা প্রশাসন গঠিত ভৈরব নদে স্যুয়ারেজ লাইন মনিটরিং এবং আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ উপ-কমিটি মাইকিং করে সতর্ক করলেও আমলে নেয়নি দূষণকারীরা। পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় থেকে দূষণ বন্ধে চিঠি দেয়া হলেও কর্ণপাত করা হয়নি। দুই ধারের শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বর্জ্য ও ময়লা ফেলছে নদে।
মৃত ভৈরব নদের প্রাণ ফেরাতে দীর্ঘ বছর ধরে আন্দোলন করেছেন যশোরবাসী। দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুরু হয় পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’। প্রকল্পের আওতায় ৯২ কিলোমিটার নদ খনন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু দখল ও দূষণমুক্ত হয়নি। নদের দুই ধারের বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা ও হাসপাতালের সোয়ারেজ লাইন নামিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রায় ১৫টি স্থানে নদে সংযোগ দেয়া হয়েছে পৌরসভার ড্রেনের লাইন। এধরনের ১০৬ ব্যক্তি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তালিকা তৈরির কথা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ভৈরব নদের বাবলাতলা থেকে নীলগঞ্জ পর্যন্ত দুই ধারের দূষণকারীর সংখ্যা ১০৬। এ তালিকা গত ১৭ জুলাই জেলার মাসিক উন্নয়ন কমিটির সভায় উত্থাপন করা হয়। এরপর জেলা প্রশাসন থেকে ‘ভৈরব নদে স্যুয়ারেজ লাইন মনিটরিং এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ উপ-কমিটি’ গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্যরা সরেজমিন নদ পরিদর্শন করে দূষণকারীদের সতর্ক হতে মাইকিং করেছেন। চিঠি দিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু নদে বর্জ্য ফেলা বন্ধ হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকা ধরে সরেজমিনে শহরের দড়াটানা অংশে গিয়ে দেখা যায় প্রায় সব হাসপাতালের বর্জ্য ও ময়লা পানি নদে ফেলা হচ্ছে।
স্বীকার করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের পরিদর্শক সৌমেন মৈত্র। তিনি বলেন, ভৈরব নদের দড়াটানা অংশের সব হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানকে দূষণ বন্ধে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত নির্দেশ মানেননি। এজন্য সেখানকার দেশ ক্লিনিক ও কিংস মেডিকেল সাভির্সের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে। আরো ছয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি আরো বলেন, পৌরসভার ১৩টি ড্রেন দিয়ে নদে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। আমরা পৌরসভাকে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছি।
যশোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আবু নওশাদ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি পেয়ে নদে কিভাবে ময়লামুক্ত পানি ফেলা যায় সেটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ড্রেনের মুখে ছাকনি দেয়া হয়েছে। যাতে পানি গেলেও আবর্জনা না যায়। তবে দূষণে কতটা কার্যকর সেটা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে আরো কাজ করা হবে।
ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, নদের দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা রেখে যেনতেনভাবে খনন শেষ করা হয়েছে। আবার দূষণকারীদের চিহ্নিত করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করা হচ্ছে। ফলে ভৈরব নদ ঘিরে শহরবাসীর যে স্বপ্ন সেটা অধরা থেকে যাবে।
আরও পড়ুন: ভর্তির তালিকায় একই শিক্ষার্থীর নাম ৯ স্থানে