নিজস্ব প্রতিবেদক
কয়েক দিনের দাবদাহের পর দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর। গতকালের তারই অংশ হিসেবে যশোরে শুরু হয় ধূলিঝড়। এরপর নামে বৃষ্টি। একইভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে কালবৈশাখী ঝড়। ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টিতে বিকেলেই নামে সন্ধ্যের অন্ধকার। এতে শহরে মানুষের স্বস্তি দিলেও গ্রামে জমিতে থাকা পাকা ধানে মই দেয়া অবস্থা হয়েছে। নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। ঝড় আর বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে যশোরের আকাশ মেঘলা হতে দেখা যায়। বিকাল তিনটার পর থেকে আকাশে ঘন মেঘের সাথে থেমে থেমে শুরু হয় দমকা হাওয়া। সাড়ে ৫ টার পরে দমকা হাওয়া আর বৃষ্টির শুরু হয়। বিকেলে ঝড় বৃষ্টির আর বজ্রপাতের মধ্যে দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায় জেলাটিতে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টা ৮০ কিলোমিটার। রাত সাড়ে আট পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও দমকা হাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঝড় চলাকালীন প্রায় আধা ঘণ্টা সময় পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ধুলো-বালিতে একাকার হয়ে যায় সর্বত্র। এদিন রাত সাড়ে আট পর্যন্ত ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
কৃষি বিভাগ বলছে, এদিনের ঝড়ের কারণে বোরো ধান, আম, লিচু ও কলা ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। বোরো আবাদ ছাড়াও আম, লিচু ও কলা ক্ষেতেরও ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। তথ্য পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে যশোরের ওপর দিয়ে মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড় যখন বয়ে যায় তখন জেলার ৮ উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে চলছিলো বোরো ধান কাটার প্রস্তুতি। এসব ক্ষেতে কোথাও ধান কেটে শুকানোর জন্য ফেলে রাখা হয়েছে আবার কোথাও পাকা ধান কাটার প্রস্তুতি নেয় কৃষক। ঠিক এমন সময় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় এসব ক্ষেতের ধান নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে কৃষক ও কৃষি বিভাগের লোকজনরা আশঙ্কা করছেন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, যশোরে চলতি মৌসুমে ১ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার শার্শা, মণিরামপুর, ঝিকরগাছা অঞ্চলের ৮০ শতাংশ ধান কেটেছে কৃষক। তবে বাকি উপজেলাগুলোতে সবেমাত্র ধানকাটা শুরু হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ এলাকায় কৃষক বিছালীর জন্য ধান কেটে ক্ষেতে ফেলে রেখেছেন শুকানোর জন্য। ঝড় ও বৃষ্টিতে এসব ধান ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর যেসব ধান এখনো কাটা হয়নি সেগুলোও মাটিতে পড়ে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে কী পরিমাণ ধানের ক্ষতি হয়েছে তা এই মূহুর্তে বলা কঠিন বলে তিনি জানান।
সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ঝড় ও বৃষ্টির আগাম খবর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়। অনেক কৃষক আমাদের আহ্বানকে গুরুত্ব দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। তিনি বলেন, সামনে বৃষ্টি বিলম্বিত না হলে সামান্য ক্ষতি হলেও কৃষক খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করা যায়। এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলের কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে অধিকাংশ এলাকার মাঠের বোরো ধান মাটিতে নূয়ে পড়েছে। পাশাপাশি যেসব ধান ক্ষেতে ফেলে রাখা হয়েছে বৃষ্টির কারণে সেগুলোও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের শামসুর রহমান বলেন, ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান রয়েছে। এরমধ্যে দুই বিঘা কেটে মাটিতে শুকানোর জন্য ফেলে রাখা হয়েছে। ঝড়ের কারণে ধান মাটিতে একাকার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আর দুই দিন সময় পেলে নির্বিঘেœ পুরো ধান ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু শেষ পর্যায়ে কালবৈশাখী ঝড়ে আমাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে। পাশের সিলুমপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ঝড়ে শুধু ধান নয়, আম, লিচু ও কলা ক্ষেতের ক্ষতি করেছে। অধিকাংশ গাছের আম ও লিচু ঝরে গেছে।
কলাগাছও ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি বলেন, এবছর বোরো আবাদে ভালো ফলনের আশা করছিলাম। কিন্তু ঝড় ও বৃষ্টিতে সে স্বপ্ন ভেঙ্গে চূরমার হয়ে গেছে। ঘুরুলিয়া মাঠের কৃষক মাফিজুর রহমান বলেন, ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করে আড়াই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছিল। ঝড়ে পাকা ধান প্রায় সব পড়ে গেছে। এ অবস্থায় সামনে কীভাবে ফসল ঘরে তুলবেন সেই চিন্তায় মাথায় যন্ত্রনা করছে। এদিকে সর্বশেষ আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, বৃহস্পতিবার রাতভর যশোরসহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এরমধ্যে উপকূলবর্তী জেলা খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে।