নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের বাঘারপাড়ার খলসি গ্রামের সৈয়দ আব্দুস সালামকে ইতালী নেয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে একটি মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেয় পাচারকারীরা। সেখানে দফাদফায় নির্যাতন করে তার পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। এসব অভিযোগ করে ভুক্তভোগী আব্দুস সালামের স্ত্রী ফারজানা বেগম যশোর মানব পাচার ও অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। মামলাটি যশোরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শুরু করে। তদন্তে নেমে পুলিশ বিদেশে যাওয়ার অভিনয় করে চক্রের সদস্য বাঘারপাড়ার নওয়াব আলীর বাড়িতে যায়। এরপর থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। একপর্যায় ওই চক্রের মাধ্যমেই লিবিয়া থেকে আব্দুস সালামকে উদ্ধার করা হয়। গতকাল রোববার পিবিআই আব্দুস সালামকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
ভুক্তভোগী আব্দুস সালাম জানান, গত বছরের ২০ মার্চ তাকে ইতালী নেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় চক্রটি। কিন্তু ইতালী না নিয়ে দিনের পর দিন বিভিন্ন স্থানে রেখে লিবিয়াতে নিয়ে যান। লিবিয়াতে নিয়ে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। কোনো দিন শুধু পানি পান করাতেন। এমনও দিন ছিলো পানিও দিতেন না। তার উপর শুধুই নির্যাতন চালানো হতো। এরপর দফায় বাড়িতে মোবাইল ফোনে কথা বলে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দিতো পাচারকারীরা। এ পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই চক্রটি।
আব্দুস সালামের স্ত্রী ফারজানা বেগম জানান, প্রতিনিয়ত সকালে একবার রাতে একবার তার কাছে কল করে টাকা দাবি করতেন পাচারকারীরা। তিনি প্রথমে গহনা বিক্রি করে টাকা দেন। এরপর যেটুকু জমি ছিলো তা বন্ধক ও বিক্রি করেও টাকা দিয়েছিলেন। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে কিশোরগঞ্জের নাদিম, শাহ পরান, যশোর বাঘারপাড়ার খলসি গ্রামের নওয়াব আলী, তার স্ত্রী রেহেনা, জামাল হোসেন, চন্ডিপুরের পিন্টুর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয় আদালত। পরে পিবিআই’র সহায়তায় তিনি তার স্বামীকে ফিরে পান।
এ বিষয়ে পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ইনসপেক্টর মীর রেজাকে। এরপর রেজা নানা কৌশল অবলম্বন করে আসামিদের সাথে যোগাযোগ করেন। এক পর্যায় আব্দুস সালামকে লিবিয়া থেকে ফেরত পাঠানো হয়। পরে সালামকে পরিবারের হাতে হস্তান্তর করা হয়।