নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) মণিরামপুর উপকেন্দ্রের জুট ফার্মিং বিভাগ পাট চাষের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এতে তিনজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মূল ভূমিকা পালন করেছেন।
তারা হলেন- উপকেন্দ্রের ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল হোসেন ও বিশ্বজিৎ কুমার। তারা পাট বোনার পরিবর্তে রোপণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। টানা চার বছর গবেষণার পর এর সফলতা পেয়েছেন বৈজ্ঞানিকরা। এবার যশোরে কৃষক পর্যায়ে রোপণ পদ্ধতি চাষ শুরু হয়েছে।
রোপণ পদ্ধতিতে পাট চাষ করলে পাটের পূর্ণ জীবনকালের পর চাষিরা কাটতে পারবেন। ফলে আগের তুলনায় ফলন বৃদ্ধি পাবে। কম জন্ম হবে আগাছা। এতে শ্রমিক খরচ কমবে। আর ধান চাষের পর জমির সঠিক ব্যবহারও সম্ভব হবে নতুন এ পাটচাষ পদ্ধতিতে। সবমিলিয়ে চারা রোপণ পদ্ধতিতে পাটের আঁশ উৎপাদনে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
এসব তথ্য জানান, বাংলাদেশ পাট গবেষণার উপকেন্দ্র মণিরামপুরের ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
তিনি আরো জানান, পাট গবেষণার যশোর অফিস চারা রোপণ পদ্ধতি সম্প্রসারণের জন্য যশোরের সদর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলায় ৭ একর জমি ‘প্রদর্শনী ক্ষেত’ হিসেবে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে পাটের চারা সরবরাহ করা হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, সাধারণ পাটের জীবনকাল ১২০ দিন। কিন্তু বোরো ধান কেটে ওই জমিতে পাট চাষ করতে গেলে পুরো জীবনকালের আগেই অনেক চাষি পাট কাটতে বাধ্য হন। ফলে পাটের উৎপাদন কমে যায়।
রোপণ পদ্ধতিতে পাট চাষ করলে সুবিধা হলো আগেই অল্প জমিতে পাটের বীজ ছড়িয়ে দিয়ে ৩৫ দিন পর তুলে তা জমিতে রোপণ করা যায়। ফলে পুরো জীবনকাল পাটগাছ পান কৃষক।
এতে পাটের উৎপাদন বেশি হয়। আর চারা থেকে থেকে চারা তিন থেকে সাড়ে তিন ইঞ্চি এবং দুই সারির মাঝে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে রোপণ করতে হবে। কর্দমাক্ত জমিতে এ নিয়মে রোপণ করায় আগাছা কম জন্মাবে। যা জন্মাবে তা পরিস্কার করতে কম শ্রমিক লাগবে।
এদিকে চারা রোপণ পদ্ধতিতে পাটের আবাদ করেছেন কেশবপুরের আলতাপোলের কৃষক আমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা সচারচর বোরো ধান কাটার পর সরাসরি বীজ বপন করে পাট চাষ করি। এতে পাটের পুরোপুরি জীবনকাল সম্পন্ন করে পাট কাটতে পারি না। ফলে পাট আঁশ উৎপাদন কম হয়। কিন্তু চারা রোপণ পদ্ধতিতে পাট আঁশ উৎপাদন করলে পুরোপুরি জীবনকাল সম্পন্ন করে পাট কাটতে পারবো এবং পরবর্তী ফসলও যথাসময়ে বপন করতে পারবো। এতে করে আমার পাটের ফলন বৃদ্ধি পাবে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরের এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে পাট চাষাবাদ হয়েছে। এছাড়া বোরো-পতিত-আমন শস্যক্রমের জমি ৫৪ হাজার হেক্টর।
এই ৫৪ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত চারা রোপণ পদ্ধতিতে পাট চাষাবাদ করা সম্ভব। এর ফলে বোরো ও আমন ধানের অনেক পতিত জমি পাট চাষের আওতাভুক্ত হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর যশোর অংশের কাজ ৬০ শতাংশ সম্পন্ন