গ্রামের পানি সংকট মোকাবিলা করেছে জনস্বাস্থ্য অধিদফতর
সুনীল ঘোষ: বদলে গেছে যশোরাঞ্চলের গ্রামীণ জীবন চিত্র। শহরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রাম। গ্রামে নেই কী-এমন প্রশ্ন আজ অনেকের। মার্চেই শহরের অধিকাংশ নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। চাপকলে পানি মিলছে না। পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানির মান- গতিও তলানিতে ঠেকেছে। শহরে পানি নিয়ে যখন হাহাকার ঠিক তখন গ্রামের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন পর্যন্ত যশোর জেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ৪৫ হাজারের বেশি নলকূপ সচল রয়েছে। এরফলে গ্রামাঞ্চলে পানির জন্য হাকার নেই।
চৈত্রের প্রখর রৌদ্রে পুড়ছে দেশ। তীব্র দাবদাহে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক ভাবে নিচে নেমে গেছে। মার্চ মাস থেকেই শহরের অনেক নলকূপে পানি নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা চেপেও মিলছে না এক কলস পানি। গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তি পর্যায়ে স্থাপিত অনেক নলকূপেরও একই দশা দেখা দিয়েছে। কিন্তু তারপরও শহরের মতো গ্রামে পানি নিয়ে হাহাকার নেই। যশোর জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের আগাম প্রস্তুতির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। যখন যেখানে দেখা দিচ্ছে যান্ত্রিক ত্রুটি, তখনি সেখানে ছুটে যাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকজন।
যশোর শহরের খড়কির আব্দুল্লাহ আল মুকিত বলেন, সেখানে পানি নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে। সাপ্লাইয়ের পানি আসে-আসে না অবস্থা। বালতি ভর্তি হতে ২০-৩০ মিনিট লেগে যাচ্ছে। তাও ময়লা আবর্জনা আসছে। কখনো আবার দুর্গন্ধযুক্ত পানি আসছে।
তিনি বলেন, পৌর এলাকায় সাবমার্সিবল স্থাপনে আইনী জটিলতা রয়েছে। যেকারণে সামর্থ থাকলেও অনেকেই সাবমার্সিবল স্থাপন করতে পারছেন না।
শেখহাটির লিয়াকত আলী জানান, টিউবওয়েলে পানি ওঠা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠের ডিপটিওয়েল থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে। আশপাশে সাবমার্সিবল নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখহাটি তমালতলা এলাকায় একটি সাবমার্সিবল থাকলে পুরো পাড়ার মানুষ উপকৃত হবে।
ষষ্টিতলাপাড়ার রিক্তা বিশ্বাস জানান, টিউবওয়েলে পানি নেই। খাওয়ার অবস্থায় নেই সাপ্লাইয়ের পানি। তাও চুনচুন করে পানি আসে। এদিয়ে থাল-বাসন ধোয়াও যাচ্ছে না। কাপড়-চোপড় ধুলে হলুটে রং হয়ে যাচ্ছে। অধিক আয়রণের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন এই নারী।
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ১২টি পাম্প থেকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পানি উঠছে কম। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পৌর এলাকায় আরও পাম্প স্থাপন করা জরুরী বলেও দাবি সূত্রের। সাপ্লাইয়ের পানিতে দুর্গন্ধ ও ময়লা আবর্জনার বিষয়ে সূত্রের দাবি পাইপ লিক হলে এমনটি হতে পারে। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এ বিষয়ে মেয়র হায়দার গনী খান পলাশের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের যশোর সদর অফিসের ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী নুর ইসলাম দৈনিক কল্যাণকে জানান, প্রত্যেক ইউনিয়নে ২৬টি করে গভীর (সাবমার্সিবল) নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। সদর উপজেলায় গভীর নলকূপ রয়েছে ২৪৫৭টি (সাবমার্সিবল)।
তিনি বলেন, এরবাইরে অগভীর তারা পাম্প ৩১৭৪টি ও গভীর তারা পাম্প রয়েছে ২২১৯টি। এসব নলকূপে পানি উঠছে। গ্রামীণ জনপদে যাতে পানি সংকট না হয়, তারজন্য গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছে জনস্বাস্থ্য অধিদফত।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৮-১০টি গভীর নলকূপে (সাবমার্সিবল) সমস্যা দেখা দিয়েছিল। খবর পাওয়ার সাথে সাথে লোক পাঠিয়ে সমাধান করা হয়েছে। যেকারণে গ্রামাঞ্চলে পানির সংকট নেই। আরও সাবমার্সিবল স্থাপন করা হবে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে-যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
যশোর জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, যশোর সদরে পানির স্তর ৩৫ ফুট নিচেই নেমে গেছে। সামনে আরও নামার আশঙ্কা রয়েছে। বিদায়ের পথে চৈত্র মাস, কিন্তু এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা নেই। যেকারণে অনেক অভীর নলকূপে মার্স মাস থেকেই পানি উঠছে না। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ২২ ফুটের ভেতর থাকলে অগভীর (চাপকল) নলকূপে পানি পাওয়া যায়। যশোর পৌরসভা ও আশপাশের গ্রামে অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। তবে গ্রামের চিত্র ভিন্ন। তিনি বলেন, সদর বাদে জেলার অন্য ৭ উপজেলায় এখনো পানির সংকট দেখা দেয়নি। জেলায় এখন পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য বিভাগের ৪৫ হাজার ৬৪টি গভীর-অগভীর নলকূপে পানি উঠছে জানিয়ে তিনি বলেন, পানির সংকট যাতে না হয়, তারজন্য উপজেলা অফিসগুলোতে নিয়মিত যোগযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ৭০ ফুট নিচেই নামলেও জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের স্থাপিত বিভিন্ন ক্যাটাগরি নলকূপে পানি উঠবে-যোগ করেন এই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা।