কল্যাণ ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা অতিরিক্ত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশে গতি বাড়াতে তিন মাসের মধ্যেই বিদ্যমান শুল্ক কমানোর ইঙ্গিতও সরকারপ্রধান দিয়েছেন।
সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে দেশটির বাজারে রপ্তানিকারক শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্নির্ধারণ করে দেন। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক নেয়। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তারা ৩৭ শতংশ শুল্ক বসাচ্ছে বাংলাদেশের পণ্যে।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক কখনো নেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর গড়ে মাত্র ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে শুল্কায়ন করা হয়।
প্রেস সচিব বলেন, “তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) চিঠিটি লিখেছেন ইউএস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। চিঠিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে যেন তিন মাসের সময় দেওয়া হয়, যাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারে।” এসময় তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে বাংলাদেশই প্রথম দেশ যারা সামগ্রিকভাবে এমন একটি কার্যকর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষি পণ্য আমদানি বাড়তে শুরু করেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, “ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্য- বিশেষ করে তুলা, গম, ভূট্টা এবং সয়াবিন আমদানি হচ্ছে। এই আমদানির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম শুল্ক নিয়ে থাকে। প্রধান উপদেষ্টা (ওই চিঠিতে) যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরও কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।”
চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হওয়া পণ্য- যেমন গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতেও শুল্ক কমানোর কথা বলা হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
শফিকুল আলম বলেন, “ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির গতি আরও বাড়ানোর জন্য শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করা হবে।”
তিনি বলেন, “চিঠিতে প্রফেসর ইউনূস ট্রাম্পকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন, “বাংলাদেশ আপনার বাণিজ্যিক এজেন্ডাকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে। বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।” বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্য উপদেষ্টাও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে আরেকটি চিঠি লিখবেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে যে বাণিজ্য যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছেন তার ঢেউ সামলাতে বাংলাদেশের জোর প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ এসেছে অর্থনীতিবিদের কাছ থেকে। এমন প্রেক্ষাপটে শীর্ষপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ, উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের নিয়ে শনিবার জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্কহার আরোপ করেছে সে বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বিষয়ে তিনি নিজেই বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন।
