পঙ্গু হাসপাতালে ব্যবসায়ী মফিজ খুন
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: যশোরে পঙ্গু হাসপাতালে খুন হওয়া ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ী মফিজুর রহমানের ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাল্টে দেয়ার অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। হাসপাতাল মালিক ডা. আব্দুর রউফ প্রভাব খাটিয়ে এ কাজ করছেন বলে মফিজুরের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। অন্য ডাক্তারদের সাথে শলাপরামর্শ করে এটি হত্যা নয়, দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে ওই মহলটি। ফলে সঠিক ময়না তদন্ত রিপোর্ট না হলে মামলার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে যাবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বর্তমানে বলছে, লিফট দুর্ঘটনায় মফিজুর মারা গেছেন। কিন্তু নানা প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
ব্যবসায়ী মফিজুর রহমানের স্বজন ফরহাদ জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ৩১ মার্চ দুপুরে হাসপাতালের সপ্তমতলা থেকে মা আছিয়া বেগমের চিকিৎসা বিল দেয়ার জন্য নিচে ডাক্তার আব্দুর রউফের কাছে আসেন মফিজুর রহমান। সেখান থেকে আর মায়ের কাছে ফিরে যাননি তিনি। দিনভর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেটে রিং দিলেও কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। এভাবে তিনটি দিন কেটে যায়।
মফিজুর রহমানের ভাগ্নে সাইফুদ্দিন বলেন, ‘ঘটনারদিন রাতে নিখোঁজের বিষয়টি ডাক্তার আব্দুর রউফকে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করতে বলি। কিন্তু ডাক্তার রউফ বলেছেন- আমি রোগীদের নিরাপত্ত্বার কথা ভাবতে পারি, কিন্তু তার স্বজনদের নয়! তখন লিফট নষ্ট তা ডাক্তার বলেননি। আমরাও লিফট ব্যবহার করেছি। নষ্ট দেখেনি।
এদিকে ওই সময়ে ভর্তিকৃত অন্য রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, ৩১ মার্চ পঙ্গু হাসপাতালের ওই লিফট কখনও বন্ধ ছিল না। সচল ছিল।
মফিজুর রহমানের ভাগ্নে সাইফুদ্দিন আরও বলেন, ওই সময়ে হাসপাতালের লিফট দুর্ঘটনা হলে কর্তৃপক্ষ কেন তখন জানায়নি? তাছাড়া লিফট কখনো বন্ধ হয়নি। লিফটে লোকজনের ওঠানামা সর্বক্ষণই করেছে। ঘটনারদিন হাসপাতালটির ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বন্ধ ছিল? তবে কর্তৃপক্ষ বলছে- সিসি ক্যামেরা নষ্ট ছিল। কোনটি সত্য?
তিনি বলেন, মফিজুর রহমানের কাছে থাকা মোবাইল ফোনটিও চালু ছিল। অব্যাহতভাবে ভুক্তভোগীর পরিবার মফিজুর রহমানকে মোবাইলে রিং করে যাচ্ছে। মোবাইলের রিং বাজলে সেই শব্দটিও লিফটম্যান বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পারেনি কেন ? ওই দিন নিচে এসে ডাক্তার আব্দুর রউফের কাছে মায়ের জন্য হাসপাতালের বিল ৮০ হাজার টাকা নিয়েও বাকবিতণ্ডা হয় মফিজুরের। ডাক্তারের রুম থেকে বের হবার পর মফিজুরের আর খোঁজ মেলেনি।
এদিকে আইন শৃঙ্খলার একটি বাহীনি সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল টাওয়ারে দেখা যায়- ওইদিন দুপুর থেকে মফিজুর রহমানের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকায় অবস্থান। তাহলে এই অবস্থান কিভাবে হলো?
ময়না তদন্তের ব্যাপারে যশোর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আবদুস সামাদ জানান, পোস্টমোর্টেম সমপন্ন হয়েছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত নিবো। তবে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন দুর্ঘটনা জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম বলেছেন, ময়না তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছেনা। তিনি আর কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পরিবারের সংশয় আর জনশ্রুতি তাহলেই কি মফিজুর হত্যাকাণ্ডটি ভিন্নখাতে নিতে ডাক্তার আব্দুর রউফসহ একটি কুচক্রি মহল ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাল্টে দিচ্ছে?
আরো পড়ুন:
ডা. রউফ-সন্ত্রাসী মধুর সম্পর্ক !
যশোরে নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর কালীগঞ্জের একজনের লাশ উদ্ধার
পঙ্গু হাসপাতালের মালিক ডা. রউফকে নিয়ে ফেসবুকে ঝড়