নিজস্ব প্রতিবেদক
নাম আলী হায়দার রানা। যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। বাড়ি যশোর শহরের কারবালা এলাকায়। বাবার নাম কামাল উদ্দিন সিদ্দিক। ১৫ দিন আগে বাড়ির সিঁড়ি থেকে পড়ে পা ভেঙেছে। বর্তমানে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। অথচ তাকে প্রথম দফার অবরোধের শেষ দিন রাতে বাস পোড়ানোর মামলায় আসামি করা হয়েছে। ৩৫ জন আসামির এই মামলায় তার নাম রয়েছে ১৯ নম্বরে। কেবল তাই না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৬৮ বছর। অথচ তার বয়স ৪০/৪২ বছর।
বিএনপি নেতারা বলছেন, আলী হায়দার রানার পা ভেঙে যাওয়ার পর ১৫ দিন ধরে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আনা-নেয়া করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত তার পায়ে প্লাস্টার। শুয়ে আছেন বাড়িতে। কবে নাগাদ হাঁটতে পারবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
গত শুক্রবার রাতে শহরের মণিহার এলাকায় বিআরটিসির একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ ৩৫ জনের নামে মামলা করে। কোতোয়ালি থানার এসআই জয়ন্ত সরকার এ মামলা করেছেন। যাদের আসামি করা হয়েছে তারা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা। এদেও মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতও রয়েছেন। যদিও মামলার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন। মামলা থেকে বাদ যাননি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবও। অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির চলমান হরতাল অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে মামলায় জেরবার যশোর বিএনপির নেতাকর্মীরা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া হরতাল আর অবরোধের চার দিনের কর্মসূচিতে ২২ মামলায় আসামি করা হয়েছে দেড় হাজার নেতাকর্মীকে। এসব মামলায় আটক করা হয়েছে পাঁচ শ’ নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার আতঙ্কে বর্তমানে ঘরছাড়া জেলা বিএনপির শীর্ষনেতাসহ অন্তত পাঁচ হাজার নেতাকর্মী। এতে এসব নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার পাশাপাশি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, কোনো কিছুই জানি না। অথচ যাত্রীবাহী পরিবহন থেকে ককটেলসহ নেতাকর্মী আটকের পর নতুন করে একটি মামলা দিয়েছে পুলিশ। এখন গ্রেপ্তারের ভয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। গ্রেপ্তার আতঙ্কে প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মী এখন ঘরছাড়া। তারপরও কর্মীরা মাঠে আছেন। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি, হঠকারী কিছু না করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, গাড়ি ভাঙচুর করার সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট অপরাধের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কাউকে উদ্দেশ্যমূলক মামলায় আসামি করা হচ্ছে না দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।