রায়হান সিদ্দিক
তিন বছর করোনাকালের অতিমারির মধ্যে আরো বড় বিপদ হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। ভুক্তভোগী হয়েছে বাংলাদেশ। স্বস্তি লাটে উঠেছে দেশের মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের। ফলে অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ঘিরে উচ্ছ্বাসে কিছুটা ভাটা তো বটেই; অনেক ক্ষেত্রে জীবনযাপনে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে। উচ্চ মূল্যের বাজারে হা-হুতাশা শোনা যাচ্ছে। রমজান শুরু হওয়ার পর ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষজন সেই তথ্যই জানান দিচ্ছে।
শুক্রবার যশোরের বড় বাজার, মুজিব সড়ক, কালেক্টরেট মার্কেট ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ ক্রেতাই শুধু পোশাক নেড়েচেরে দেখছেন, কিনছেন কম। এমনি একজন ক্রেতা শহরের ঘোপ নওয়াপাড়ার বাসিন্দা তাওহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম তুলনামূলক বেশি। তাই বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেও তার ৬ বছর বয়সী শিশু কন্যার জন্য পোশাক কিনতে পারেননি। তার তথ্য মতে গত বছর যে পোশাকের দাম ছিলো ৪শ থেকে ৫শ ৫০ টাকা, সেই পোশাক এবছর বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ৭শ টাকা।
তাওহিদুল ইসলামের মতো এমন অভিযোগ প্রায় সব ক্রেতারই। শহরের রেল রোড এলাকার বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক মণি মিয়া বলেন, আগে ভাগে মার্কেটে এসেছি শিশুদের জন্য জামাকাপড় কিনতে। কিন্তু শিশুদের যে জামা পছন্দ হয় তা কিনতে হলে পরিবারের অন্যদের আর ঈদের কেনাকাটা হবে না। ১০ থেকে ১৫ টা দোকান ঘুরেছি সব জায়গায় দাম বেশি। বাধ্য হয়ে শিশুদের পছন্দের জামাকাপড় কিনে দিয়েছি। বছরের একটা দিন আমরা নতুন জামা না পরলেও ছোটদের তো দিতেই হবে। তিনি জানান, পোশাকের দাম যদি একটু কম থাকতো তাহলে পরিবারের সবাই হয়তো ঈদে নতুন জামা পরতে পারতো।
সরেজমিন বড় বাজারের বেশ কয়েকটি শিশুদের পোশাকের দোকান ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবছর পোশাকের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। যার কারণে ক্রেতা ভিড় বেশি হলেও বাস্তবিক অর্থে বিক্রি বেশি হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্রেতা পোশাক পছন্দ করার পর দাম শুনে, না কিনেই চলে যাচ্ছেন। এতে ব্যবসায়ীদের কপালেও চিন্তার ভাজ পড়েছে।
সিটি প্লাজার কিডস ক্লাবের সত্ত্বাধিকারী মোমিনুল ইসলাম রাসেল জানান, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও বিমান ভাড়া বাড়ার কারণে পোশাক আমদানি খরচ বেড়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় এবছর পোশাকের দাম প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে যে পোশাক আমরা কিনেছি ৩শ থেকে ৪শ টাকায় এবছর সকল খরচসহ সেই পোশাক কিনতে হচ্ছে প্রায় ৫শ থেকে ৬শ টাকায়। তারপর দোকান ভাড়া কর্মচারীদের বেতন রয়েছে। আর কিছু লাভ না করলে আমরাই বা কিভাবে চলবো। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি স্বল্প লাভে পোশাক বিক্রি করার। যাতে সকলেই এবছর স্বাচ্ছন্দে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
ব্লুজ এর সত্ত্বাধিকারী খায়রুজ্জামান সুজন বলেন, দীর্ঘদিন ব্যবসার পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিলো। করোনাকালীন সময়ে অধিকাংশ ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবছর আমরা সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আশা দেখছি। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেশি। যার জন্য ক্রেতাদের সাথে প্রতিনিয়ত বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি ১৫ থেকে ২০ রোজার পর বাজারে বেচাকেনা বাড়বে। এবং আমরাও বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।
বড় বাজারে টম এন্ড জেরির সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলিজা বলেন, ঈদে কাপড়ের দাম কিছুটা বাড়তি থাকেই। তাছাড়া এবার সব কিছুর মূল্য অনেক বেশি। আমরা কিনে আনছি চড়া মূল্যে। এরপর আমাদের লাভ, কর্মচারীদের বেতন বোনাস, অন্যান্য খরচতো আছেই। এটুকু লাভ না রাখলে আমরাও অচল হয়ে যাব।’
বেবি ফ্যাশনের সত্ত্বাধিকারী তারিকুজ্জামান বলেন, ঈদ কেন্দ্রিক বিক্রি এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক। শিশুদের মার্কেটে বেচাকেনা ভালোই থাকে। তাই এ সময়টাতে বেশি কথা বলার সুযোগ থাকে না। এজন্য সব দিক বিবেচনা করে আমরা একটা মূল্য নির্ধারণ করে দেই। যাতে কাস্টমারের সঙ্গে বেশি কথা বলতে না হয়।
