সভাপতি মিলন ভাই একটা কমিটি দিলেন। সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারও কমিটি দিলেন। গ্রুপিং-ঝামেলা বেড়ে গেলে। দলের অমঙ্গল হলো। এটা তো কাম্য নয় : জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু
কেন্দ্রের নির্দেশ ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা ও কেন্দ্রে কমিটি জমা দেওয়া। আমরা দিয়েছি। সেটা ৩০ মে জেলা আওয়ামী লীগের সভা শেষে পত্রিকা দপ্তরে প্রেরণ করি : শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আসাদুজ্জামান
নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর পৌর শাখার কমিটি ঘোষণা ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগের বিভেদের রাজনীতির বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি পক্ষের এই কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ফুলেল শুভেচ্ছায় গা ভাসালেও কমিটি ভুয়া বলছেন সংগঠনের জেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। অনেকের ভাষ্য, কমিটি ঘোষণায় পুরনো বিভেদ জেগে উঠেলো জেলা আওয়ামী লীগে।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর যশোর সদর ও শহর আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। সমন্বয় না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে শহর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু। সভাপতি পদে পরাজিত হয়েছিলেন কামাল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে লুৎফুল কবীর বিজু ও এসএম আজাহার হোসেন স্বপন। সেই ভোটে এমপি কাজী নাবিল আহমেদ ও শহিদুল ইসলাম মিলন গ্রুপের ভরাডুবি হয়েছিল। এরপর শহর শাখার গ্রুপিংটা প্রকাশ্যে রূপ পায়। শহর আওয়ামী লীগের কোন কর্মসূচিতে কোনদিন পরাজিত পক্ষের উপস্থিতি দেখেননি নেতাকর্মীরা। বিজয়ী পক্ষ তাদের ডাকেননি। এভাবে গত আড়াই বছর পার করা আসাদ-বিপু ‘জুটি’ পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পেতে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বরাবর তালিকা জমা দেন।
সোমবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় কমিটি অনুমোদন দিতে প্রস্তাব রাখেন সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। জেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন কমিটি অনুমোদনে কেন্দ্রের নির্দেশনা প্রসঙ্গ এনে স্থানীয় এমপির সাথে সমন্বয় করে তা অনুমোদন দেওয়া হবে বলে সভায় জানিয়েছিলেন। সভা শেষে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই উত্থাপিত তালিকা পত্রিকা দপ্তরে প্রেরণ করেন সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু। পরদিন কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা নেতারা ফুল দিতে যান যশোরের বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে। কর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা নিয়েছেন। জানতে চাইলে যশোর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশ ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা ও কেন্দ্রে কমিটি সাজিয়ে জমা দেওয়া। আমরা দিয়েছি। আর সেটা ৩০ মে জেলা আওয়ামী লীগের সভা শেষে পত্রিকা দপ্তরে প্রেরণ করি।
শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী লুৎফুল কবীর বিজু (বর্তমানে জেলা কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক) বলেন, ‘জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করেননি। তাই গঠনতন্ত্র মতে এটা তো কোন কমিটিই না। বৈধ বলারই বা কি আছে। আর অবৈধ বলারই কি আছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা তো গায়ের জোরে রাজনীতি করে। রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সভ্যতা থাকলে তারা যে তালিকা করেছে সেখানে সদস্য পদে হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী হিসেবে আমার, কামাল হোসেন ও এসএম আজাহার হোসেন স¦পনের নাম থাকতো।’
এদিকে মঙ্গলবার জেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন পত্রিকায় বিবৃতি পাঠন। বলেন ওটা ভুয়া কমিটি। আর সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তার কাছের লোক হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আফজাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার সাথে কথা বলে লাভ নেই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলতে হবে। আর যারা কমিটি জমা দিয়েছে তাদের কাছে শুনতে হবে।
জানতেই চাইলে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু বলেন, ‘এটা সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা বলা যায়। এতে মঙ্গল বয়ে আনে না। এতে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ বাড়ে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ধরেন সভাপতি মিলন ভাই একটা কমিটি দিলেন। সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারও কমিটি দিলেন। গ্রুপিং-ঝামেলা বেড়ে গেলে। দলের অমঙ্গল হলো। এটা তো কাম্য নয়।
অপরদিকে, তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের ঘিরেও চলছে নানান বিতর্ক। কেউ ফেনসিডিল বিক্রেতা, কেউ চাঁদাবাজির সাথেও জড়িত রয়েছে। অনুমোদনহীন কমিটি বলে বিতর্কিতদের বিষয় নিয়ে নেতৃবৃন্দ কথা বললেও বক্তব্য কোড করতে নিষেধ করেন।