সুনীল ঘোষ: ফাস্ট ফুডসহ শিশু খাদ্যের পরিমাণ ও দাম নিয়ে প্রতারণায় নেমেছে নামি-দামি কোম্পানিগুলো। কোনো রকম ঘোষণা নেই। ইচ্ছে মতো প্যাকেটে পণ্য কমানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে দাম। লাগামহীন দামের কারণে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ পুষ্টি সম্মৃদ্ধ খাবার কিনতে পারছেন না। কিনেও প্রতারিত হচ্ছেন। এরফলে অনেক শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এনিয়ে উদ্বিগ্ন পুষ্টিবিদরাও।
যশোরের বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিশুর প্রতিটি খাদ্যের দাম লাগামহীন। ব্যবসায়ীদের অনেকে স্বীকার করেছেন বছরের ব্যবধানে শিশু খাদ্যের দাম দেড় থেকে আড়াই গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। মাস ছয়েক আগেও আড়ং ও প্রাণের প্যাকেটজাত আধা লিটার দুধের দাম ছিল ৩৮ টাকা। এখন সেই দুধ কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
বোম্বে সুইটস পটেটো কেকার্সের দাম ১০ টাকা রেখে প্যাকেটে ৩০ গ্রামের পরিবর্তে ১৫ গ্রাম চিপস সরবরাহ করছে। কিষান কোম্পানি ৩৭০ গ্রাম বিস্কুটের প্যাকেটে দিচ্ছে ২৭০ গ্রাম। পণ্য কমানোর পরও ৪৫ টাকার বিস্কুটের দাম করেছে ৬০ টাকা।
অলিম্পিক ও প্রাণ কোম্পানিও একইভাবে ভোক্তা ঠকাচ্ছে। খ্যাতিনামা কোম্পানিগুলো প্রতারণার পথ বেছে নেয়ায় ভূইফোঁড় বেকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অস্বাস্থ্যকর পণ্য বাজারাজাত করছে। এসব ভূঁইফোড় বেকারি প্রতিষ্ঠান পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম করায় ভোক্তা সেদিকেই ঝুঁকছেন।
বৃহস্পতিবার কথা হয় চৌরাস্তার মদিনা বেকারির মালিক মিজান উদ্দিনের সাথে। শিশু খাদ্যসহ ফাস্টফুডের দাম বৃদ্ধি ও প্যাকেটে পণ্য কমিয়ে দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা পরাধীন। কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই কোম্পানিগুলো প্যাকেটে পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে অর্ধেক করেছে। পণ্যের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি দামও বাড়ানো হয়েছে। দর-দামে লাগামহীন ও প্যাকেটে পণ্য কম দেয়ার ঘটনা প্রতারণার সামিল বলেও মন্তব্য তার।
শহরের অভিজাত একটি বেকারির জনৈক কর্মচারী জানান, ফাস্ট ফুডসহ শিশু খাদ্যের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, নেসলে কোম্পানির ৪শ’ গ্রাম দুধের দাম ছিল ৭শ’ টাকা। এখন সেই দুধের দাম করা হয়েছে ৯৭৫ টাকা। বছরখানেক আগে ৪শ’ গ্রাম ল্যাকটোজেনে’র টিনের জারের মূল্য ছিল সাড়ে ৪শ’ টাকা।
তার দাম উঠেছে সাড়ে ৬শ’ টাকায়। সাড়ে ৪শ’ গ্রাম ‘প্রাইমা’ দুধের টিনের জার ছিল সাড়ে ৪শ’ টাকা। এখন ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে ৬৬০ টাকা লাগছে। ৪শ’ গ্রাম সেরেলাকের দাম ছিল (মানভেদে) আড়াইশ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৪৫৫ টাকায়।
আড়াইশ গ্রাম ডানোর প্যাকেটে বেড়েছে ৫৫ টাকা। যা মাস কয়েক আগেও ছিল ৩৬০ টাকা। এখন কিনতে হচ্ছে ৪২০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে আরও বেশি। ৩ মাস আগেও নিডো কোম্পানির ৭শ’ গ্রামের জার কেনা গেছে ৫৬০ টাকায়। এখন কিনতে হচ্ছে ৫৪০ টাকায়।
হাটচান্নির মা কালি ভান্ডারের মালিক মধুসূদন পাল জানান, আড়াইশ গ্রাম থেকে শুরু করে সাড়ে ৩শ’ গ্রাম বিস্কুটের প্যাকেটে ২০ থেকে ২৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুভঙ্করের ফাঁকির ব্যবসায় মেতে উঠেছে দেশের খ্যাতিমান কোম্পানিগুলো।
তিনি বলেন, কিছু কোম্পানি প্যাকেটে পণ্যের পরিমাণ অর্ধেক কমিয়ে দিয়ে আগের দাম ঠিক রেখেছে, কেউ আবার পণ্য কমানোর পাশাপাশি দামও ডাবল করেছে। তিনি বলেন, এক কথায় প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তা।
বেকারি কর্মচারী কামাল হোসেন বলেন, দুধের বাইরে নুডলস ও বিস্কুটের দামও বেড়ে গেছে। স্থানীয় বেকারিগুলো বিস্কুটের কেজিতে ২৫ টাকা বাড়িয়েছে। মাসখানেক আগেও ৮ প্যাকেটের মিস্টার নুডুলস’র দাম ছিল ১১৫ টাকা, এখন তা বিক্রি করতে হচ্ছে ১৬০ টাকায়।
মেগিসহ সব নুডুলস’র দাম ফ্যামিলি প্যাকেটে ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে কোম্পানি। প্যাকেটে পণ্যের পরিমাণ কমানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ কোম্পানি পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে দাম বৃদ্ধি করছে। যেকারণে শিশু খাদ্যের বাজারে বছরভর অস্থিরতা বিরাজ করছে।
হাশিমপুরের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক আবু বক্কর বলেন, পুষ্টি সম্মৃদ্ধ খাবার কিনতে বেতনের অর্থেক চলে যাচ্ছে। এক বছর আগেও ১ কেজি ৮শ’ গ্রাম ল্যাকটোজেন দুধ কিনেছি ২৩শ’ টাকায়। এক লাফে সেই দুধের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩ হাজার টাকা।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ ড. শিরিন নিগার বলেন, শিশু খাদ্যের দর-দামের দিকে সরকারের নজর দেয়া উচিত। তিনি বাড়িতে ফলের জুস বানিয়ে ও সুজি এবং সবজি খেচুড়ি খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন এরমাধ্যমে পুষ্টিহীনতার হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব।