এইচএম সাগর হিরামন, খুলনা: প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফ্রি ফায়ার অনলাইন খেলা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যা থেকে রাত যতই গভীর হয়, ততই বাড়তে থাকে মাদক সেবনকারীদের ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা চায়ের দোকানগুলোতে উঠতি বয়সের যুবসমাজ মেতে উঠেছে এ মরণনেশা খেলায়।
বটিয়াঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগুলোতে এদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাতে ফাঁকা ওয়াপদা রাস্তায়, লিজ ঘেরের বাসায়, বিভিন্ন পরিত্যক্ত বাসা বাড়িতে বসবাসকারীরা আতংকে থাকে এসব নেশাখোর ও খেলায় আসক্তদের ভয়ে। প্রতিবাদ করলেই হামলার শিকার হতে হয় প্রতিবাদকারীদের।
এদের ভয়ে মুখ খুলতে পারেনা এলাকাবাসি। গোটা এলাকা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে এই মাদকসেবীদের কাছে। কোনভাবে ঠেকানো যাচ্ছেনা এই মাদক বিক্রেতাদের। ফলে দিন দিন চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে বটিয়াঘাটার যুবসমাজ তথা আইনশৃঙ্খলা। মাঝেমধ্যে অভিযান হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীরা।
সেই সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুবকদের মোবাইলে ফ্রি ফায়ারের মত জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে স্কুলগামীরা। সন্ধ্যার পর হলে বিভিন্ন চায়ের দোকানে, বালুরমাঠ, নদীর চর, ফাঁকা রাস্তাসহ বিভিন্ন নিরিবিলি স্থানে এদেরকে আড্ডা দিয়ে গেম খেলতে দেখা যায়। একই সাথে মাদকসেবীদের সাথে মিশে মেতে ওঠে এই জুয়ার নেশায়।
বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা এলাকার কৈয়া বাজার বালুর মাঠ, রাজবাঁধ সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার ভিতরে, উত্তর শৈলমাারী এলাকার সৌমেন বৈরাগী, উৎস হালদার, চয়ন মন্ডল, হিরোক রায়,রাজু মন্ডল, জয়খালীর শহিদুল ইসলাম, জিরোপয়েন্ট বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের ভিতর, মাথাভাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশে পাশে। সুরখালী ও গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে রয়েছে এদের একটি সিন্ডিকেট বাহিনী। মাদক তালিকায় রয়েছে এই দুই ইউনিয়নের নাম। তেঁতুলতলা বাজারের পাশেই জলমা পরিষদ মাঠ।
চক্রাখালী পুরাতন খেয়াঘাট, মল্লিকের মোড়ে, নদীর পাশ দিয়ে ওয়াপদা রাস্তায়, লিজ খামার। আশিকনগর, মহম্মদনগর, আরাফাত এলাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে। বটিয়াঘাটা সদরে নাহাড়ীতলা বাংলালিংক টাওয়ার এলাকায় মাদক সেবনকারীদের আস্তানা। বটিয়াঘাটা ব্রিজের নিচে হাসান, মাসুম জয়, জিয়া। ছয়ঘরিয়া এলাকায় দিবদাশ, অজিত, কাজল, অশোকসহ আরো অনেকে রয়েছে মাদকের সাথে জড়িত।
সম্প্রতি উপজেলার গাওঘরা এলাকায় মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় কুদ্দুস শেখ নামের এক মিল শ্রমিক রক্তাক্ত জখম হয়। কাতিয়ানাংলা এলাকার মাদক সম্রাট ইব্রাহিম গাজীর নেতৃত্বে রয়েছে একটি মাদক সিন্ডিকেট গ্রুপ।
দেড় মাস পূর্বে এদের নেতৃত্বে বতর্মান চেয়ারম্যান আসলাম হালদারের বাড়ির সামনে গভীর রাতে একটি মালবাহী গাড়ি থামিয়ে, গাড়ি চালকসহ তার হেলপারকে বেদম মারপিট করে গাড়ি ভাংচুর করে। একই এলাকার সংখ্যালঘু স্বপন দাসের পরিবার এলাকার মাদকখোরদের অব্যাহত হুমকির ভয়ে রয়েছে চরম নিরাপত্তাহিনতায়। উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে রয়েছে মাদকসহ বন্যপ্রাণী হাসপা, তক্কো কেনা বেচা সিন্ডিকেট একটি চক্র।
এদেরকে বেশিরভাগ সময় খুলনা জিরোপয়েন্ট এলাকায় ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। ভান্ডারকোট, বালিয়াডাঙ্গা, আমিরপুর, গঙ্গারামপুরসহ সুরখালী ইউনিয়নে রয়েছে মাদক সেবন কারিদের একটি সংঘবদ্ধচক্র। উপজেলার বিরাট এলাকার টিপু (ঘরজামাই) ও তালবুনিয়া এলাকার মুশিয়ার শেখের পুত্র সজীব মাদক মামলায় সম্প্রতি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পায়।
বতর্মান তারা জেল থেকে বেরিয়ে আবারও মাদকের আঁখড়া গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে গত তিন মাসে ১৫/২০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে। এদের কাছ থেকে ৭৭৫ গ্রাম গাঁজা ও ১৯৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে মোট ১২টি মাদকদ্রব্য আইনে মামলা হইছে। বটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহা জালাল বলেন, মাদকের সাথে কোন আপোষ নেই। মাদকের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে ও থাকবে।