নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতিবছরই যশোর প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ফেভারিট দলের তালিকায় থাকে জাগরণী সংসদ। তবে চলতি মৌসুমে প্রথম দুই ম্যাচে সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি ঝিকরগাছার দলটি। প্রথম ম্যাচে ১৪ রানে শেষ ছয় উইকেট হারিয়ে ২৫ রানে হারে ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে। পরের ম্যাচে ঝিকরগাছার আর এক দল প্রদিপ্ত পথ ক্রিকেট একাডেমির সাথে ৯৬ গুটিয়ে যেয়ে হারে ৪ উইকেটে। দুই হারে রেলিগেশনের শঙ্কায় পড়ে দলটি। তবে শৈশবের ক্লাবের এমন দুর্দশায় হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি জাতীয় দলের সাবেক বাঁহাতি পেসার সৈয়দ রাসেল।
মঙ্গলবারের ম্যাচটি খেলতে নিজ উদ্যোগে ঢাকা থেকে চলে আসেন বিপিএলে সিলেট সিক্সার্সের সহকারি কোচের দায়িত্ব পালন করা রাসেল। রাসেল একাদশে ফিরতেই বদলে যায় পুরো দলের চেহারা। রাইজিংস্টারের বিপক্ষে তুলে নেয় লিগের প্রথম জয়।
রাসেল নিজেও এদিন ব্যাট বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন। বল হাতে দেখে মনে হয়নি বয়সের কোটা ৩৮ পেরিয়ে গেছে। বোলিং কোটার প্রায় পুরোটা শেষ করেছেন। ৯ ওভার বোলিং করে কোন উইকেট না পেলেও রান আটকানোর চিরায়িত কাজটা করেন ঠিকঠাক ভাবে। এক মেডেনসহ দেন মাত্র ৩০ রান। রাসেলের এমন কিপটে বোলিংয়ের সাথে দলের তিন স্পিনার অমিত কুমার নয়ন, রমেশ কুমার রাজু ও বহিরাগত কোটায় খেলা রাহির দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রতিপক্ষ রাইজিং স্টার ক্লাব ১৩৫ গুটিয়ে যায়। ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামা রাসেলের প্রায় পঞ্চাশ ছোয়া ও নাঈমুল ইসলামের ৫০ রানের ইনিংসে ৬ উইকেটের জয় পায় সর্বশেষ আসরে সুপার ফোরে খেলা দলটি। প্রথম জয়ে পায়ের নিচে মাটি খুজে পাওয়া দলটি এখন সুপার ফোরে খেলার স্বপ্ন দেখছে।
এদিন শামস্-উল-হুদা স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় রাইজিং স্টারের অধিনায়ক আবীর হোসেন। ব্যাট করতে নেমে রাসেল ও নয়নের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রানই নিতে পারেননি রাইজিং স্টারের দুই ওপেনার সাগর ও আবীর হোসেন। একসাথে ১২ ওভার ৫ বল ক্রিজে থেকে স্কোর বোর্ডে জমা করতে পারেন ২৮ রান। দুজনেই রাজুর শিকার হওয়ার আগে করেন ১৮ রান। সাগরে ৪৩ বলের ইনিংসের একটি করে চার ছয়ের মার। প্রথম দুই ম্যাচে ফিফটি করার আবির খেলেন ৫০ বল। দুই ওপেনারের মতো রাইজিংয়ের কোন ব্যাটারই তাদের ইনিংস বড় করতে পারেননি। রিয়াদ সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন। এরপাশে রোহিত করেন ২০, মতিন ও অয়ন ঘোষ করেন ১৭ রান করে।
জাগরণী সংসদের রাজু ৩৫ রানে ৩টি, নয়ন ৯ ওভার ২ বলে ১৭ রানে ও রাহি ৮ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১১ রানে ২টি করে উইকেট দখল করেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দারুন শুরু পায় জাগরণী সংসদ। আম্প্যায়ার কাউন্টার মেশিনে বল গোনা শুরুর আগে জাগরণী স্কোর বোর্ডে ১০ রান জমা হয়। আলাউদ্দিনের করা প্রথম ওভার থেকে আরও একটি চারের মার মারেন ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামা রাসেল। প্রথম ওভারে ১৭ রান দেয়া আলাউদ্দিন আর কোন বলই পায়নি। আরএক পেসার অন্তুও রানের লাগাম টেনে ধরতে পারেননি। তাতে চতুর্থ ওভারেই গত ম্যাচে ১০ ওভার ৪ দেয়া আজমানের ডাক পড়ে। বোলিংয়ে এসেই রাজুকে তুলে নেন আজমান। আজমানের পর সোহান বোলিংয়ে আসলে একপাশ থেকে জাগরণীর রান তোলার গতি কমে যায়। তবে অন্য পাশে রাইজিংয়ের বোলারদের আগলা বল গুলো থেকে বাউন্ডারি আদায় করে রাসেল। তবে দলীয় শতক পূরণ হওয়ার আগেই সাজঘরে ফিরে যায় রাসেল। সোহানের বলে আম্প্যায়ার জাকির আহমেদ রেভিন যখন আঙ্গুল তুলে দেন রাসেল তখন অর্ধশতক থেকে চার দূরে ছিল। যদিও আম্প্যায়ারের এই কট বিহাউন্ডের সিদ্ধান্ত প্রথমে মেনে নিতে পারেনি রাসেল। আউটের পর বেশ কিছু সময় ক্রিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫৩ বলে ৮টি চার মারা রাসেল। রাসেলর পর নিপুনও দ্রুত সাজঘরের পথ ধরলে কিছুটা চাপে পড়ে। তবে নাঈমুল ও রাহির ব্যাটে দলের জয় ভাবতে হয়নি জাগরণীর। ৬৩ বলে ৮ চারে ৫০রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ে নাইমুল। আর রাহি করেন অপরাজিত ৭রান। ১৭ বল ক্রিজে থেকে দুর্দান্ত সুইপ শটে মারেন একমাত্র বাউন্ডারি।
রাইজিং স্টারের আজমান ৩৩ রানে ২টি, সোহান ও সাকিব ১টি করে উইকেট দখল করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
টস : রাইজিং স্টার ক্লাব
রাইজিং স্টার ক্লাব : ৪৫.২ ওভার ১৩৫/১০ (সাগর ১৮, আবির ১৮, অয়ন ঘোষ ১৭, রিয়াদ ২৪, মতিন ১৭, রোহিত ২০, সোহান ৭, আজমান ১, অন্তু ০, সাকিব ০, আলাউদ্দিন ৪*; সৈয়দ রাসেল ০/৩০, নয়ন রায় ২/১৭, রাহি ২/১১, মঈন আহমেদ ১/২৭, রাজু কুমার ৩/৩৫, নিপুন ০/৫, হাসান ০/৮)।
জাগরণী সংসদ : ২৬.৩ ওভার ১৩৬/৪ (রাজু ৭, সৈয়দ রাসেল ৪৬, মাহমুদুল রনি ০, নাঈমুল ইসলাম ৫০*, নিপুন ৪, রাহি ৭*; আলাউদ্দিন ০/১৭, অন্তু ০/১৯, আজমান ২/৩৩, সোহান ১/২৮, আবির হোসেন ০/১৮, সাকিব ১/১১, রোহিত ০/৬)।
ফলাফল : জাগরনী সংসদ ৬ উইকেটে জয়ী।