জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ইস্যুতে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণা জোরদার হয়েছে। সহযোগী ও বন্ধুপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বসে নেই। লবিং-গ্রুপিং ভুলে একাট্টা হয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এ মুহূর্তে দলটির মুখ্য উদ্দেশ্য দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করে শক্তির মহড়া দেখানো। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা এটি হবে স্মরণকালের সর্ব বৃহৎ ও ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ। এতে অনন্ত ৬ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম হবে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে লবিং-গ্রুপিং হাওয়ায় মিশে গেছে। সবাই এখন একাট্টা। কিভাবে জনসভা সফল করা যায় এজন্য বিবাদমান দ্বন্দ্ব ভুলে এক টেবিলে বসছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতবৃন্দ। গতকাল জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলার এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়রসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা সভায় মিলিত হন। এ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক এমপি শাহীন চাকলাদার, এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, এমপি রণজিৎ কুমার রায়, এমপি অধ্যাপক নাসির উদ্দিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল মজিদ উপস্থিত ছিলেন।
মিটিংয়ে অংশ নেন যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ড. মোস্তানিছুর রহমান, ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর, মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম। আরো উপস্থিত ছিলেন ঝিকরগাছা পৌরসভার মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল, চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল, বাঘারপাড়া পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চু, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুজিব-উদ-দ্দৌলা সরদার কনক ও উপ দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার প্রমুখ। এসভা থেকে কিভাবে ব্যয় নির্বাহ করা হবে সেবিষয়ে আলোচনা করে একটা সমাধান বের করেন নেতৃবৃন্দ।
এদিকে সবার টার্গেট প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে মহাসমাবেশে রূপ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা। দলে লবিং-গ্রুপিং থাকলেও জামায়াত-বিএনপি’র নৈরাজ্য রুখতে আওয়ামী লীগ যে একাট্টা তা প্রমাণে শক্তির মহড়া দেখাবে বলে জানিয়েছেন যশোর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
আগামী ২৪ নভেম্বর ঐতিহাসিক যশোর শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা পরবর্তী এটি হতে যাচ্ছে জেলা শহরে প্রথম জনসভা। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন জানান, দ্বাদশ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। যেকারণে জনসভায় ৬ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম ঘটানো হবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের জবাব দিতে সারাদেশে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর দেশব্যাপী জনসভা যশোর থেকে শুরু হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতার প্রত্যাশা ৬ লাখের বেশি নেতাকর্মী জনসভায় যোগ দিয়ে রূপ দেবে মহাসমাবেশে। এজন্য প্রতিদিন সাংগঠনিক ইউনিটগুলো ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সমাবেশ হচ্ছে। জেলার নির্দেশনা মতো যশোর শহর ও উপজেলা পর্যায় ছাড়াও জেলার গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজারে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এসব সভায় জেলা নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগ ৮টি উপ-পর্ষদ গঠন করে। উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ চষে বেড়াচ্ছেন গ্রামের অলি-গলি। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশে আসার অনুরোধ করা হচ্ছে।
এদিকে বুধবার বিকেলে তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা সামির ইসলাম পিয়াসের নেতৃত্বে শহরে বিশাল প্রচার মিছিল বের হয়। অসংখ্য নেতাকর্মী প্রচার মিছিলে অংশ নেন। তারা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নানা স্লোগান দেন। এ সময় শহরে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মিছিলে উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন যুবলীগ নেতা শাহিন হোসেন, শ্রমিকলীগ নেতা আবুল কাশেম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আমীন মীর, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, মাসুদ রানা, ইব্রাহিম শরীফ, আহম্মেদ হৃদয় ও শুভ প্রমুখ। প্রসঙ্গত, সামির ইসলাম পিয়াস যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনের ছেলে।
বুধবার সন্ধ্যার আগমুহূর্তে সরেজমিনে দেখা যায় স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে একটি গেট করা হয়েছে। নিয়মিত টহলে রয়েছে পুলিশ। স্টেডিয়ামের উত্তরাংশে আরেকটি গেট নির্মাণের কাজ হচ্ছে। এসবের তত্ত্বাবধান করছে জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ। আশপাশের সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ চেকআপের কাজ করতে দেখা যায় ওজোপাডিকোর কর্মীদের। এরই মধ্যে স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের প্রবেশ সীমিত করেছে পুলিশ।
আওয়ামী লীগের দলীয় ও যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, সভাস্থল নিয়মিত পরিদর্শন করছেন দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রতিদিনই আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে বৈঠক করছেন। বুধবারও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিশ^স্ত সূত্রের দাবি, এখন পর্যন্ত ৫ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। তবে এটিই চূড়ান্ত না। পরিস্থিতি বুঝে বাড়ানো হতে পারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: মণিরামপুরে গর্ভের সন্তান হত্যার অভিযোগে স্বামী শ্বশুরের নামে মামলা