নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায়ের সাথে লকারে সোনা রাখা নিয়ে গোলযোগে তদন্তে এসেছে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। বুধবার তারা তদন্তকাজ চালিয়েছেন। আজও তদন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত দলের প্রধান। ব্যাংকের অডিট শাখার এজিএম সাইন উদ্দিন সেরনিয়াবাদ।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ মার্চ এমপি রনজিত কুমার রায় তার স্ত্রী নিয়তি রানী রায়কে নিয়ে জনতা ব্যাংক যশোর প্রধান শাখায় যান। নিয়তি রানীর নামে ভাড়া নেওয়া ব্যাংকের লকার খুলে সংরক্ষিত মালামাল নেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ব্যাংকে যান। ব্যাংকের এজিএম রত্না চক্রবর্তী নিয়তি রানীর লকার না খুলে তার ছেলে রাজীব রায়ের নামে ভাড়া নেওয়া লকার খুলে ফেলেন। দুটো চাবি ছাড়া লকার খোলার কথা না থাকলেও একটি চাবিতে খুলে যাওয়ায় ব্যাংকের লকারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সংসদ সদস্য। এ নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। সরকারি ব্যাংকের গ্রাহকের লকারের নিরাপত্তা ও সেবার মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই সংসদ সদস্য। এ নিয়ে শহর জুড়েই তোলপাড় চলছে। বিষয়টি জানাজানি হলে এই শাখাতে লকার ভাড়াটিয়ারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। নিজেদের গচ্ছিত সম্পত্তি ঠিক আছে কিনা মঙ্গলবার সকাল থেকে কয়েকজন লকারভাড়াটিয়া ব্যাংকে এসে খোঁজ খবর নিয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটির একটি সূত্র। গ্রাহকের ভাড়া করা লকারের নিরাপত্তা ও সেবা নিয়ে তোলা অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সেবাগ্রহীতারা।
তবে এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক যশোর প্রধান শাখার এজিএম ইমরান হোসেন শামীম বলেন, ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। ব্যাংকের লকারে ত্রুটি ছিল। ত্রুটি থাকলেও কোন মালামাল খোয়া যায়নি। এটি নিয়ে সংসদ মহোদয়ের সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝি হয়। পরে বিষয়টি সমাধান হয়েছে। গতকাল আমাদের প্রধান কার্যালয় থেকে দুই সদস্যর একটি তদন্ত দল এসেছিল। তারা সবকছিু খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। যেহেতু গত ১৩ বছর ধরে লকার ভাড়া নিয়ে রেখেছেন। সেকারণে না খুললে লকারের তালা ঠিক রয়েছে কিনা তা জানা যায়না। এরআগে কখনও এধরণের ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন: যশোরে জনতা ব্যাংকের লকারকাণ্ড : নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন খোদ এমপি রনজিৎ কুমার রায়
জানা যায়, যশোর শহরের জেস টাওয়ারে জনতা ব্যাংকের যশোর প্রধান শাখার দুইটি লকার ভাড়া নেওয়া আছে সদস্য সদস্য রণজিত রায়ের স্ত্রী নিয়তি রানী রায় ও ছেলে রাজীব রায়ের নামে। ৬ মার্চ রনজিৎ রায় তার স্ত্রী নিয়তি রায়কে নিয়ে ব্যাংকে লকার খুলতে যান। এ সময় ব্যাংকের এজিএম রত্না চক্রবর্তী সংসদ সদস্যের স্ত্রী নিয়তি রানীর লকার না খুলে তাদের ছেলে রাজীব রায়ের নামে বরাদ্দকৃত লকার খুলে ফেলেন। ওই লকারের নিরাপত্তা নেই দাবি করে গচ্ছিত মালমাল নিজের জিম্মায় নিতে চান রনজিত রায়। ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা এজিএম ইমরান হোসেন লিখিত দেওয়ার কথা বলেন। তখন সংসদ সদস্য খাতায় স্বাক্ষর করে নিতে বলেন। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তারা গড়িমসি করেন। এতে সময়ক্ষেপন হওয়ায় সংসদ সদস্য ক্ষুব্ধ হন। পরে লকারের মালিক রাজীব রায়ের মুঠোফোনে মৌখিক সম্মতিতে লকারের মালমাল সংসদ সদস্যের জিম্মায় দেওয়া হয়।
এতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় সংসদ সদস্য উত্তেজিত হয়ে ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা ইমরান হোসেনকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে যান। এ সময় ব্যাংকে হইচই পড়ে যায়। এর মধ্যে ব্যাংকে পুলিশ গিয়ে হাজির হয়। তবে সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় ব্যাংক কর্মকর্তাকে ধাক্কার বিষয়টি অস্বীকার করে ৭ মার্চ যশোর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তান আমল থেকেই জনতা ব্যাংকে তাঁদের পরিবারের নামে লকার ভাড়া নেওয়া। লকার খুলতে দুটি চাবি লাগে। একটা তাঁদের কাছে, অন্যটি ব্যাংকের কাছে থাকে। কিন্তু চাবি ছাড়াই ছেলের লকার ব্যাংকের কর্মকর্তা খুললেন কীভাবে? ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, লকারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করে মালামাল নিতে চাইলে লিখিত দিতে বলেন। খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দিতে বললে তাঁরা সম্মতি না দিয়ে আধা ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। তখন তিনি রাগ করে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে আসেন। তিনি ব্যাংকের কাউকে ধাক্কা দেননি।
সংসদ সদস্য ও ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রাথমিক তদন্ত করতে মঙ্গলবার দুপুরে যশোরে এসেছিলেন খুলনা বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক অরুণ প্রকাশ বিশ্বাস। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকার হেড অফিস থেকে আমাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যশোরের প্রধান শাখায় গিয়ে উদ্ভূত ঘটনা জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে। এরপর চূড়ান্ত তদন্ত দল ঢাকা থেকে পাঠানো হবে। একটি চাবি দিয়ে লকার খোলা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকারের তালায় কোনো সমস্যা না থাকলে একটা চাবি দিয়ে লকার খোলা সম্ভব নয়।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যশোরে জনতা ব্যাংকের একটি শাখায় লকার ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ব্যাংকে ছোট ও বড় দুই ধরনের লকার ভাড়া নেওয়া যায়। ছোট লকারের বার্ষিক ভাড়া ২ হাজার ৩০০ এবং বড় লকারের ৪ হাজার ৬০০। লকার খোলার জন্য ব্যাংক ও বরাদ্দ নেওয়া ব্যক্তির কাছে দুটি চাবি থাকে। লকারে দুই দফা তালা থাকে। লকার খুলতে হলে দুই পক্ষের দুটি চাবিই তালায় প্রবেশ করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ ইচ্ছে করলেই লকার খুলতে পারবেন না।
তদন্তে আসা ব্যাংকের অডিট শাখার এজিএম সাইন উদ্দিন সেরনিয়াবাদ জানান, আমাদের তদন্তকাজ চলমান রয়েছে। লকারে কোন সমস্যা রয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হ্চ্ছে। আজ বৃহস্পতিবারও তদন্তকাজ চলবে। এরপর সামনের সপ্তাহে প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় যশোরে যুবলীগনেতাকে সাময়িক বহিষ্কার
৩ Comments
Pingback: চলচ্চিত্রকার ও সার ব্যবসায়ী গোলাম মোর্শেদের জমি-বাড়ি দখলে নিল ইসলামী ব্যাংক
Pingback: চাঁদার দাবিতে মারপিটের ঘটনায় চারজনের নামে মামলা
Pingback: তিন মুক্তিযোদ্ধার রণাঙ্গনের দুঃসাহসিক যুদ্ধ দিনের গল্প শুনলেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী