চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছার বেড়গোবিন্দপুর বাওড় ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাঁওড়ের বিভিন্ন খাতের অর্থ এবং (বিল বাওড়) অবৈধভাবে লিজ দিয়ে ব্যক্তিগত সুবিধা ভোগের এই সকল অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাওড়ের মৎস্যজীবী ও স্থানীয়রা। তবে অভিযোগকে অস্বীকার করে বাওড় ব্যবস্থাপক রিয়াজউদ্দিন জানান ‘সরকারি এই বাওড়কে লুটেপুটে খাচ্ছে প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীরা। দীর্ঘদিন ধরে বাওড়টি স্থানীয় প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীদের দখলে রয়েছে। তাই ফিসিং চলাকালীন ল্যান্ডিং সেল (মাছ ধরার পরে ঘাটে নিয়ে এসে সরকারি দরে সর্ব সাধারণের মাঝে মাছ বিক্রি) বন্ধ রয়েছে’। তবে যারা লুটপাট করছে তাদের নাম প্রকাশ করতে পারবেন না বলেও জানান বাওড় ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন।
তিনি আরো বলেন, সরকারি ক্যানাল ও লেক দীর্ঘদিন প্রভাবশালীরা চাষ করে আসছে। গত কয়েকদিন সরেজমিনে বাওড় ও বিল ঘুরে এবং বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি এই বাওড়ের সকল কর্মকা- সরকারি অর্থে পরিচালিত। কিন্তু তারপরেও বাওড় এবং বিল দীর্ঘদিন প্রভাবশালীরা চাষ করে আসছে। এখনো বিলের ভিতরের ক্যানাল নামে বড় অংশে শামীম কবির ওরফে কিলার শামীম, বাঁওড়ের ১ ও ২ নং পুকুরে ইব্রাহিম হোসেন এবং গাংবিলা নামে বাওড়ের বড় একটি অংশ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের প্রভাবশালীরা। এছাড়া ইমরান হোসেন বিলের ৩টি পুকুরের দুটিতে মাছ এবং অন্যটিতে ধান চাষ করছেন। এ সকল উৎস থেকে সরকার অর্থ বঞ্চিত হলেও বাওড় ব্যবস্থাপকের পকেট ভারি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বাওড়ে মাছ ধরা শেষ হয়েছে। সেখানেও প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ লুট হয়েছে। সে সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে থানা পুলিশের সামনেই মাছ লুট হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা জানিয়েছে, বড় বড় মাছগুলো প্রভাবশালি ও সন্ত্রাসীরা নিয়ে বাজারে বিক্রি করেছে। খোদ ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিনও এমনটাই অভিযোগ করেন।
এদিকে বাওড়ের মৎস্য প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থাপক যে তথ্য দিয়েছেন তাতে জানা যায় যে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বাঁওড়ের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ৮০ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫০০ (১০০% হিসেবে) এবং বিলে ১২ লাখ টাকা। সে হিসেবে সরকার বাওড়ের উৎপাদন খাতে মৎস্যজাত দ্রব্য ৯০ হাজার, মৎস্য ও প্রাণি খাদ্য ১৫ লাখ ৬৪ হাজার এবং অনিয়মিত শ্রমিক মজুরি বাবদ ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বাওড়ের (২০২১-২০২২ অর্থ বছরে) লক্ষ্যমাত্রা ৪৮ লক্ষ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা এবং বিলে ১২ লাখ টাকা। বিপরীতে এ পর্যন্ত বাওড় থেকে (মৎস্য আহরণে) ২২ লাখ এবং বিল থেকে মাত্র ৫ লাখ টাকা অর্জিত হয়েছে। তার তথ্য মতে বিলে ৪ জন (৫ হাজার করে প্রত্যেকে) এবং বাওড়ে ২৪ জন (৩ হাজার করে প্রত্যেকে) অনিয়মিত শ্রমিক আছে। যাদের বেতন বাবদ বছরে ১১ লাখ ৮ হাজার টাকা দিতে হয়। যা সরকারি বরাদ্দ থেকেও ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা বেশি। এই টাকা অন্য খাত থেকে ম্যানেজ করা লাগে। কোথা থেকে টাকা ম্যানেজ হয় সে বিষয়ে উত্তর না দিয়ে ‘আমি রোজা আছি বলেই মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন’।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, এই দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে।