কল্যাণ ডেস্ক :
রাতেই প্রস্তুত হয়ে গেছে মঞ্চ। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ গোলাপবাগ মাঠে শনিবার বেলা ১১টায় শুরু হবে। সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ১০ দফা ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সমাবেশের স্থান নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে সংঘাত, বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক, তল্লাশিচৌকি বসিয়ে পুলিশের ব্যাপক তল্লাশি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ‘সতর্ক পাহারার’ মহড়া সব মিলিয়ে রাজধানীর পরিবেশ কিছুটা থমথমে। সব মিলিয়ে একধরনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে। সমাবেশের স্থান নিয়ে টানাপড়েন শেষে দলটিকে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বিএনপি সমাবেশ করবে। এই সমাবেশের জন্য প্রস্তুতি নিতে বিএনপি খুব কম সময়ই পেল। যদিও গত ১২ অক্টোবর থেকে শুরু করা বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি রাজধানীতে সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে শেষ করার ঘোষণা দলটির আগে থেকেই ছিল।
গত তিন দিনে নানা ঘটনার পর শুক্রবার দুপুরে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার রাতের মধ্যে ভরে যায় সমাবেশস্থল। এখনো নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসছেন। মাঠে জায়গা না হওয়ায় অনেক নেতা-কর্মীই রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন।
মধ্যরাত থেকেই স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত সমাবেশস্থল। এসব স্লোগানে দলটির চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হচ্ছে। এ সময় স্লোগানের মাধ্যমে নিজ নিজ কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে দেখা যায় নেতাদের।
মানিকগঞ্জ থেকে এসেছেন হাবিব। তিনি বলেন, পথে পথে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ছিল। আমিসহ তিনজন মুরগির গাড়িতে করে গুলিস্তান কাপ্তানবাজারে আসি। এরপর পায়ে হেঁটে সমাবেশে এসেছি।
তিনি বলেন, আমরা কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামার জন্য সমাবেশে আসিনি। আমরা আমাদের বন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে এসেছি, চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবি নিয়ে এসেছি।
ফেনী থেকে এসেছেন সইজদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, আমি পাঁচ দিন আগে ঢাকা এসেছি। এক আত্মীয়ের বাসায় এই কয়দিন ছিলাম। সমাবেশের অনুমতির কথা শুনেই শুক্রবার বিকেলে এখানে আসি। রাতেও ছিলাম, সমাবেশ শেষ করে ফিরবো। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিক-নির্দেশনা নিয়ে এলাকায় কাজ করতে চাই।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি গত আগস্ট থেকেই কর্মসূচি পালন করে আসছে। অক্টোবর থেকে শুরু বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে গিয়ে দলটি বাধা ও হামলার মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছে। এ ছাড়া সমাবেশগুলোর আগে বিভিন্ন বিভাগে পরিবহন ধর্মঘটও হয়েছে।
বিএনপি দাবি করেছে, সমাবেশে বাধা দিতেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে আগস্ট মাস থেকে গত বুধবার রাজধানীতে সংঘর্ষের ঘটনাসহ দলটির ৮ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নেতারা। বুধবারের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পর পুলিশ রুহুল কবির রিজভী, শিমুল বিশ্বাসসহ কয়েক শ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে।
গতকাল গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, গোলাপাবাগে গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছি আমরা। বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরু হবে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সমাবেশস্থল নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তার জন্য সরকার দায়ী।
তিনি বলেন, সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে আমরা ১০ দফা দাবি পেশ করব। দাবি পূরণে আল্টিমেটাম দেওয়া হবে। আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ শেষে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক যেসব দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হবে। সমাবেশে ঢাকাবাসীকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।