এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের উপরে হেলে পড়া শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। মহাসড়কের মাঝখান পর্যন্ত এসব গাছ হেলে থাকায় যানবাহন ও পথচারীকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। গত পাঁচ বছরে গাছের ডালের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর পাশাপাশি মহাসড়কে রয়েছে অসংখ্য মরা ও শুকনো গাছ। বিশেষ করে এ মহাসড়কের ঝিকরগাছা এলাকার গাছ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিকরগাছার মল্লিকপুর ধেভড়িপাড়া থেকে নাভারণ পুরাতন বাজার পর্যন্ত অন্তত শতবর্ষী ১৫টি বড় শিশুগাছ মহাসড়কের মাঝখান পর্যন্ত হেলে পড়েছে। ফলে বড় কাভার্ডভ্যান ও পরিবহন চলাচল করতে পারছে না। এরমধ্যে মল্লিকপুর ধেভড়িপাড়া, কীত্তিপুর পালপাড়া, হাজিরালী মহিলা কলেজ মোড়, বালিখোলা, বেনেয়ালী, গদখালী ফুল বাজার, নবীবনগর মোড়, কলাগাছি, নাভারণ কলোনী পাড়া এবং নাভারণ পুরাতন বাজার এলাকায় সড়কের উপরে গাছ হেলে রয়েছে। এসব স্থানে আরও ২০টি মরা গাছের নিচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া, ঝিকরগাছা বাজারে কপোতাক্ষ নদের উপর সেতুর পশ্চিমপাশে মাঝখানে তিনটি গাছ রেখে সড়ক প্রসস্থ করা হয়েছে।
উপজেলার বেনেয়ালী গির্জার সামনে মহাসড়কের দুইপাশে ৫টি গাছ এমনভাবে হেলে রয়েছে যে কোনো বাস-ট্রাক চলার সময়ে সড়কের একপাশ দিয়ে যেতে পারে না। আর বড় কাভার্ডভ্যান ও পরিবহনগুলো সড়কের মাঝখান দিয়ে চলাচল করা ছাড়া উপায় নেই। এখানকার হেলে থাকা গাছগুলোর যানবহনের সাথে ধাক্কা খেয়ে গাছের অর্ধেক ভেঙে পড়েছে। গত তিন বছরে শুধু এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭জন মারা গেছেন।
বেনেয়ালী গ্রামের শাহীন আহম্মদ বলেন, গির্জার সামনে এলাকায় সড়কের দুইপাশের শতবর্ষী শিশুগাছগুলো হেলে গেটের মত হয়ে রয়েছে। এতে কোনো যানবাহন তার নির্দিষ্ট পাশ দিয়ে চলাচল করতে না পারায় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে। বিশেষ করে গাছে বেঁধে যাওয়ার কারণে যখন রংপাশে গাড়ি চেপে চলাচল করে তখন মোটরসাইকেলসহ ছোট গাড়িগুলো ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে। এমন দুর্ঘটনায় গত তিন বছরে অন্তত ৭জন ঘটনাস্থলে মারা গেছেন।
শাহীন আরও বলেন, হেলে থাকা এসব গাছের সাথে যানবহনের ধাক্কা লেগে গাছগুলো ভেঙে চিকন হয়ে গেছে। তাই যে কোনো সময় গাছের ডাল ভেঙে প্রাণহানী ঘটতে পারে। এসব গাছগুলো কাটার দাবি করছি।
নবীবনগর গ্রামের আওলাদ হোসেন বলেন, নবীবনগর বাসস্ট্যান্ডে এলাকায় প্রায় সব গাছের অংশবিশেষ সড়কের ভেতরে। এজন্য সড়কে চলাচলকারী যানবাহন গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা ঝুঁকিতে থাকি।
ঝিকরগাছা সদর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার খলিলুর রহমান বলেন, মল্লিকপুর ধেবড়িপাড়া এলাকায় একটি বড় শিশুগাছের অর্ধেক রাস্তার উপরে। এ গাছটি রাস্তার দিকে হেলে থাকায় প্রায় বাস-ট্রাক ধাক্কা খায়। গাড়ি বেধে যায়, উল্টে যায়। বছর দুই আগে একটি বাস ধাক্কা খেয়ে অর্ধশত যাত্রীবাহী আহত হয়েছিল। এসব গাছ অপসারণ না করলে দুর্ঘটনা থেকেই যাবে।
মোহাম্মদ বাবু নামে এক বাস চালক বলেন, উপরে গাছের ডাল ও নিচে সড়কের মধ্যে ঢুকে পড়েছে গাছের গোড়া। বামপাশ দিয়ে চলার কথা থাকলেও গাছে বডি বেধে যাওয়ায় রংসাইডে ঢুকে পড়া লাগে। তখন যদি সামনের দিক থেকে গাড়ি আসে তাহলে বিপদে পড়তে হয়। তাই খুব ঝুঁকি নিয়ে এ মহাসড়কে গাড়ি চালাই।
ঝিকরগাছার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেবার সভাপতি আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো কাটার জন্য গণস্বাক্ষর, মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদান করাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল হক বলেন, মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলোর বিষয়ে জেলার মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিক বার বলেছি। গাছগুলো জেলা পরিষদের সম্পদ। তারা জানিয়েছে গাছগুলো কাটার প্রক্রিয়াধীন।
যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল জানান, গাছ কাটা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। বিষয়টি সুরাহা হলে আমরা টেন্ডারের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ সব গাছ অপসারণ করবো।